আবার লিখবো আমি একশো বছর পরে...

নীল দিগন্তে ফুলের আগুন ছিলো না কোনোদিন।
বিপুল তরঙ্গে জীবন উথাল পাতাল হয়নি সেভাবে।
ইতিহাস সেখানে বড় নির্লিপ্ত অসহায় আমার কাছে।
চোখ অর্ধ উন্মিলিত রেখে শেষ নিঃশ্বাস নিয়েছিলেন বাবা।
পিসি গিয়েছিলেন মাদারের নির্মল হৃদয়ে  শেষ শয়ানে।
আমাদের পরিচয় ছিলো না।
আমরা ছিলাম উদ্বাস্তু।

ছোটো থেকে একরাশ মৃতদেহ টপকে একটু একটু করে বেড়ে ওঠা আমার।
ঠাকুমা, বিধবা পিসি, ঝ্যাঠা, অবিবাহিত রুগ্ন কাকু, টিবিতে ভোগা বাবা।
রোদ ছায়ার আলপনা এঁকে যেত উঠোনে।
বাসা বাড়ি।
খাটা পায়খানা।
স্যাঁতস্যেঁতে ঘর।
বাবার মুখ দিয়ে তাজা রক্ত!

আমাকে শোনানো হতো ফলসা গাছের গল্প, জামের গাছে জাম, গোয়াল ভরা গাই।
মেঘের পরে মেঘ জমিয়ে দাদা ফিরে আসতো দুধের খালি বোতল নিয়ে।
হরিণঘাটার দুধ বন্ধ।
মসিক  টাকা বাঁকি।
প্রাথমিক স্কুলের মাষ্টার মশাই বুঝতে দিত না কিছু।
সেদিন বারো জন লোকের সাথে বাসা বাড়ির রকে পাত পারতেন কবি শামসুর রহমান।
একটা চটি বই খুলে সত্তরের দশকের এক শেষ রাতে বাবা পড়তেন....
বাবা উচ্চারণ করতেন.....
বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে বারান্দায় লাগে জ্যোতস্নার চন্দন।
ঠাকুমা দুধ বিহিন একদশীতে চিনি জলে রুটি গুলতেন....।
তাঁর মাথায় থাকতো কাঁচা সন্দেশ, এক কাঁসি দুধ, বিন্নি ধানের খই...বাগানের ডয়রা কলা।

তোমাকে এইসব কথা বলতে পারিনি কোনোদিন।
বলতে পারিনি আমি ভয় পাই নিরন্নতায়।
আমি ভয় পাই অন্ধকারে।
আমি ভয় পাই রোজগার হীনতায়।
আমি ভয় পাই মাঝপথে আটকে যাওয়ার।
আমি ভয় পাই একাকিত্ত্বে।
আমি ভয় পাই তোমাকে হারানোর।

কিছু দিতে পারিনি আমি কাউকে কোনোদিন।
কোনো কিছু দেওয়া হয় না আমার।
তোমাকেও না।
এতদিন পরেও না।
এত মুহূর্ত...এতোভালোবাসা জমে থাকার পরেও
এখন শুধু শূন্যতা।
এখন শুধু
মেঘের পরে মেঘ, ঋণের পরে ঋণ।

লাল রঙের গাছের নীচে তোমার আঁকা লাল রঙের ঘর আমার দেওয়ালে এখোনো ঝোলে।
একা...
অনন্ত প্রতীক্ষায়।
এ আমার শাস্তি
তোমার নয়.....।
এখন
মাঝরাতের অনন্ত প্রহরে গন্ডুষভরা জলে আমি চেয়েছি আমার মৃত্যুকামনা।
চেয়েছি ক্ষয় হোক আয়ুর, ক্ষয় হোক দেহের।
চেয়েছি এক অনন্ত নিদ্রার ভিক্ষা।

প্রার্থনা করেছি শত আলো বিকশিত হোক তোমার ঘরে...তোমার সুরে.....।
প্রার্থনা করেছি শরতের নীল আকাশ তোমায় দিক ভালোবাসার স্বাধীনতা।
প্রার্থনা করেছি শিউলি ফুলের উষ্ণতা সাজাক তোমাদের যতনে।

এবার আমার নিষ্ক্রমণের সময়।
আমার নিমীলিত চোখে ছায়া ফেলুক ফলসা গাছের পাতা।
জমাট বাঁধুক মেঘ।
গন্ডুষভরা চোখের জলে আচমণ করি
ইচ্ছামৃত্যুর স্বপ্ন।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় লেখা গুলি