গেড়ি গুগলির সহবাস
চিরকাল বাঙালির চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে
থেকেছে নদ-নদী, বড় বড় পুকুর। ছোট বড় নানা রকমের জলাশয়। সেই জলাশয়ের মধ্যে লুকিয়ে
থেকেছে অনেক রকমের খাবার-দাবার আর বাঙালির নিজস্ব প্রোটিন। শুধু জলের মধ্যে জন্মায়
এমন শাক আর গুল্ম খেয়ে কাটিয়েছে বাঙালি অনেক দিন। এখনও। কতরকম শাকের যে লম্বা
লিস্ট আমাদের রান্না ঘর গুলোতে পাওয়া যেত তার যদি একটি সঠিক মূল্যায়ণ হত তাহলে
বাঙালির খাদ্যের ইতিহাসে অবাক হওয়া ছাড়া আর অন্য কিছু থাকতো না। আমাদের বাবাদের
দিকের চারপাশে ছিল অনেক অনেক নদী। আর মা, বড়মা, ঠাম্মার দিকে ছিল ইচ্ছামতী,
ভাগিরথী, অনেক খাল-বিল বড় বড় পুকুর। যখন কলমী বুড়ি চুবড়ি ভরে ক্লাস ফোরের বইতে শাক
তুলতে আসেনি তার আগেই কলমী শাক বাড়ির তৈরী কাসুন্দি দিয়ে খাওয়া শুরু হয়ে গেছে।
আমার বড়মা অসাধারণ একটা গেড়ি গুগলির
তরকারি রান্না করতেন। আমরা সেটাকে ঠাট্টা করে বলতাম ‘ছোট লোকের খাওয়া’। আর আমার
দাদা একটু ভদ্রজনোচিত বাঙালী হয়ে তার সদ্য জীবনানন্দ চর্চা থেকে কোট করতো “বাজারের
পোকা কাটা” জিনিসের চর্চা আমাদের বাড়ির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বহু দিন গেড়ি গুগলি খাওয়া
হয় না। বড়মা রান্না করা ভুলে এখন তাঁর পঁচাশি বছর জীবনে আবার ছোট্ট বেলার স্কুলে
পড়তে যায়। একটা বিছানার ওপর বসে থাকে। ভাবে তার বাবা বুঝি এই মাত্র বাজার করে
আসবে। এতো আমাদের সব বাড়ির গেরস্থালির গপ্পো।
আজ বাজারে গিয়ে অনেক দিন পরে গেড়ি
গুগলি দেখে এতো কথা মনে পড়লো যে বৈদ্যবাটি থেকে আসা দিদির সাথে মনের সুখে দুটো কথা
বললাম। ভাদ্রের পুকুর গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কড়াইতে চড়বড় করতে থাকলো থলথলে
মাংস গুলো আলু পেঁয়াজ আর রসুনের সাথে। সারা বাড়ি ভরে গেল গরীবের মাংস মাংস গন্ধে।
ইচ্ছে থাকলো একদিন থলে ভর্তি করে নিয়ে আসার। কিন্তু তারপরে পনির খাওয়া বাঙালির
সংসারে কি ঝড় উঠবে সেটার অনুমান না করেই আপাতত অতীতে ডুব দিলাম। ও ভালো কথা। ইহা
অনার্য ভারতের খাবার। তখনও হিন্দুরা এসে পৌঁছোতে পারেননি মনে হয়। রামের বনবাস তারও
অনেক পরে।
উত্তরপাড়া বাজারে আড়াইশো গ্রামের দাম মাত্র তিরিশ টাকা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন