জিন্দেগি না মিলেগি দুবারা

জিন্দেগি না মিলেগি দুবারা
ছবি দেখতে বসলে প্রথমেই কি দেখি আমরা গল্প? তার বিন্যাস? ছবির কাঠামো? কোনটা ভালো করে ঢুকে যায় আমাদের মগজে?
এই নিয়ে বিস্তর আলোচনা আছে। মোটা মোটা , রোগা রোগা অনেক বই আছে। আমার ভাঙা আলমারীর তাকে আছে বছর দশেক আগেকার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিদ্যাবিভাগের গুচ্ছের জেরক্স আর নোট। আছেন ডেভিড ব্রডওয়েল, ক্রিস্টিন থমসন। একটু ঘুর পথে জেমস মোনাকো। বইয়ের  তাকে আছে বিষয় চলচ্চিত্র, চলচ্চিত্র মানুষ এবং আরো কিছু, চলচ্চিত্র ভূত বর্তমান এবং ভবিষ্যত।
আছে দিনের পর দিন মৈনাকদার হাতে কলমে শিখিয়ে দেওয়া ফিল্ম টেক্সট এবং স্টাডিজ। কিভাবে একটা ছবির শব ব্যবচ্ছেদ করবো। কিভাবে পরিচালকের পাশ দিয়ে ডানা মেলে গজাবে দর্শকের চিন্তাভাবনা। কিভাবে অতর থিওরি জানান দেবে না অতরের কারিকুরী!
সব কি মাথায় ঢুকতো তখন? এক্কেবারেই না। কিন্তু কোথায় একটা ভালোলাগা আর ভালোবাসা ছিলো। কোথায় ছিলো মফস্বল শহর  থেকে পৌনে তিন ঘন্টার পথ অতিক্রম করে গিয়ে আত্তীকরণের চেষ্টা।
কিভাবে ছবিকে পড়তে গিয়ে বিষ্ণু বসু আসবেন। কোন ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়বেন রবীন্দ্রনাথ আর কোথায় একটা মন কেমন করা বিকেলে মেঘে ঢাকা তারা শেষ করে সটান ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাবেন সঞ্জয়দা কাউকে আর কোনো কথা না বলতে দিয়ে....সেসব আমার কাছে এখন সময়ের ভাস্কর্য। 
কিন্তু তবুও এখন যখন আমি বুড়ো। এখন যখন আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম এবং মিডিয়া স্টাডিজে ক্লাস নিতে যাই....যখন সামনের বেঞ্চিতে সার বেঁধে বসে থাকে তরুন প্রজন্ম তখন আমি তাদের কাছে শোনাই সেই তো পারসিস্টেন্স অব ভিজনের গল্প। বলি আমাদের একটা ভুলের ওপর কি দাঁড়িয়ে নেই গোটা ছবি দেখার পক্রিয়াটা? তরুন মুখ গুলো সচল হয় । গেস্টাল্ট সাইকোলজি কোথাও যেন বহু যুগের ওপার থেকে এক ভর দুপুরে কলকাতার বইপাড়ার পাঁচ তলায় এসে হাজির হয়। জন বার্জার তার দেখার পথের নানান কার্য বিবরণী নিয়ে একটা পাতলা চটি বই মেলে ধরেন। কোথাও তখন কি আমার মনে পড়ে যায় না দশ বছর আগের কোনো এক দুপুরের কথা? কোথাও কি এসে পথ খুলে দেয় না বেঙ্গল ল্যাম্পের আর্টস বিল্ডিং এর এক তলার সেই  স্যাঁত স্যেঁতে ঘর? যেখানে দিনে দুটো করে ছবি দেখা নিয়ম ছিলো। যখন টোরেন্ট ছিলো না। কমপিউটার বলতে ভগবান মনে হতো। আর মোবাইল ফোন? সেই আগুন তখনো আবিষ্কার হয়নি। ফিল্ম সোসাইটিগুলো তখোনো উঠে যায় নি পটাপট, একের পর এক। তখোনো নর্থ ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটির জ্যোতিদা কিম্বা বালি সিনে গিল্ডের অঞ্জনদা রাস্তায় দেখা হলেই বলতো কাল একটা কুরোশোওয়া আর বিকেল চারটেতে সেমিনার। চলে আসিস কিন্তু।
কেনো একটা ছবির নাম বোল্ড অক্ষরে লিখে এই কথা গুলো লিখলাম?
কেনো তার শব ব্যবচ্ছেদ হলো না? আমার মনে হয় হলো না কারণ আমার মনে হলো দরকার নেই তাই।
আমার মনে হল এই ছবির পরিচালক এবং  সংলাপ রচয়িতা, অভিনেতা দুই ভাই বোন  নিজেদের এক অক্ষর বৃত্তের মধ্যে ঘোরা ফেরা করছেন। দুজনের ছবি, সংলাপ, চরিত্ররা কোথাও যেন তাদের আগের ছবির কোনো না কোনো রেশ রেখে দিচ্ছে।
সাদা মাটা গল্পে কোথাও যেন চিহ্ন থেকে যাচ্ছে অনেক না বলা কথার। কিম্বা আগে যে বলা হয়েছে সেই কথা গুলোর।
কিন্তু সেই কথা গুলো ঠিক কি, সেটা হয়তো এই মুহূর্তে আমিও ঠিক জানি না।
কিম্বা বলতে ইচ্ছে করছে না। কিম্বা মনে হচ্ছে ভাবনার জায়গাটা থাক।  

মন্তব্যসমূহ

  1. এই লেখাটা পড়ে জিন্দেগী না মিলেগি দোবারা ছবিটার সম্পর্কে কিছু বিশেষ জানলাম না। কিন্তু ফিরে গেলাম ১২-১৩ বছরের পুরোনো খুব ভাললাগা দিন গুলিতে। হটাত করেই মনে হল - সত্যি- জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা...হারিয়ে যাওয়া দিন গুলি আর ফিরে আসবে না রে ঃ) তোর টিফিন বক্স ছিনিয়ে নিয়ে চাউমিন খাইনি অ-নে-ক-দি-ন

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় লেখা গুলি