কাকমানুষের চকখড়ি


কাকমানুষের চকখড়ি
“নদী মরে গেলে সত্যি হারিয়ে যায়
দুপাড়ের মানুষের মন থেকে ঝড়ে পড়ে
বয়সের মতন এক একটা নিটোল স্বপ্ন
প্রতিটা গল্পের সাথে জেগে থাকে দীর্ঘশ্বাস
এরকম কথা আমাকে শুনিয়েছে একজন বুড়ো চাষি...”


 না কোনো কবিতার বই নয়। কুলদা রায় লিখছেন তাঁর আখ্যানের ভূমিকা। যা আর কিছুক্ষণের মধ্যে নিছক  আখ্যানের গন্ডি পেরিয়ে আপনাকে নিয়ে ফেলবে এমন এক দেশে...এমন এক পরিসরে...যা আপনার অতি চেনা। সেই সোঁদা গন্ধ...আখ্যানের চরিত্র... আপনাকে নিয়ে যাবে ফেলে আসা সময়ে...ধূলি ধূসর স্মৃতি মেদুরতায়। বারবার বর্তমান আর অতীতের সংঘাত আসবে লেখনীর গতি প্রবাহের চমকে; আবার কোথাও শিল কড়াই গাছটার মতো আপনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে নির্বাক। যে গাছ এই টুকরো টুকরো আখ্যানের অনেক অংশের শ্রোতা...দর্শক...আবার হয়তো বা কোথাও পাঠকও বটে।


আমরা শুধু বুড়োচাষির নির্মিত প্রতীককে খুঁজে পাই না, বরং তার সাথে পেয়ে যাই আরো অন্য  অনেক অনুষঙ্গ। যে অনুসঙ্গের সাথে বেড়ে উঠেছেন লেখক, যে অনুসঙ্গের সাথে একটা দেশের জল, হাওয়া, মাটি তাকে লালন পালন করেছে। সেই দেশটাকে ছেড়ে যখন অনেক দূরে কোথাও চিরদিনের মতো চলে যেতে হয়, তখন কথক মনে করেন, “এই প্রথম সত্যি সত্যি হারিয়ে গেলাম। কোনো বটগাছ, গোহাট, জিব বের করা মা কালী, ঘুম কাতুরে শিব ঠাকু্‌র, ছোট মাঠ, খাল পাড়, শিল কড়াইয়ের ছায়া, বুড়ো মিস্ত্রী, আধগড়া নৌকো, অথবা আমার ভুলু কুকুরটিও আজ জানে-যে যায় সে আর ফেরে না। ”


 ফেরে না আখ্যানের কথক। কিন্তু ফিরে ফিরে আসে সব মোটিফ স্মৃতির রাস্তা ধরে। কখোনো সে লৌকিক, আবার কখোনো সে পুরাণাশ্রিত। কখোনো তাকে পাই নদীর ধারে আবার কখোনো বা কদম তলায়। চেয়ে থাকার...পথ চলার...প্রদীপ জ্বালার এই নিরন্তর আখ্যানের জাল বোনেন কুলদা রায়। 


বিস্তৃত ব্যাখ্যানের সুযোগ এবং সময় এখানে নেই। শুধু আছে টুকরো টুকরো ভালো লাগা। আছে এক কথকথার সাথে পরিচয় হওয়া। যে হারিয়ে যাওয়া সময়ের পঙ্কতি নিয়ে বসে আছেন মহাকাল।

হয়তো তার পথ ধরেই অমল বধির হয়ে যায়। টম সাহেবের পরিতক্ত্য বাড়িতে হাওয়া ওঠে শন শন। একদিন প্রদ্যুম্ন জঙ্গল থেকে ফিরে আসে...সবাই অবাক হয়ে দেখে কেউ তার মাথায় গুঁজে দিয়েছে ময়ূরের পালক। বোষ্টমী খঞ্জনী বাজিয়ে গান ধরে “ তোর তরে কদম তলায় চেয়ে থাকি।” আর ঠিক তখনই কি আশ্চর্যের মধ্যে পাঠক আবিষ্কার করেন অনন্ত ফুলের পাঁপড়ি গুলো ধারণ করছে  অসংখ্য নীল চিঠি।

যে চিঠি পাঠাচ্ছেন কুলদা রায় আমাদের কাছে। যে ম্যাজিক রিয়ালিজম তাঁর লেখায় বিন্যস্ত...তার পূর্ব কথন বাংলা সাহিত্যে থাকলেও এই স্মৃতিকথা...এই আখ্যান...এই সময়ে স্বতন্ত্রতার দাবী রাখে।

হে পাঠক বিশ্ব বই দিবসের সপ্তাহে পড়ে ফেলুন কাকমানুষের চকখড়ি
ধন্যবাদ দিন আমার প্রকাশনীকে। যাঁরা তাঁদের প্রকাশের সূচনা লগ্নে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। রেখেছেন স্বতন্ত্রতার আরেক আখ্যান।
ভালো থাকুন।
বই সপ্তাহ শুভ হোক।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা গুলি