শান্তিনিকেতন...
শান্তিনিকেতন...
ইচ্ছে ছিলো অনেক দিনের। ইচ্ছে ছিলো বেড়িয়ে পড়ার। মন শুধু খুঁজে বেড়াচ্ছিলো ফাঁক-ফোঁকড়। আমার অফুরন্ত ছুটির পাশে, পূর্বাশা খুঁজছিলো তিন দিনের গ্যাপ।
আমি চাইছিলাম সমুদ্র।
ও চাইছিলো লাল মাটি।
আমি চাইছিলাম পাহাড়।
ও চাইছিলো হাত বাড়ানোর দূরত্ত্ব।
অনেক ঝগড়া...মন কষাকষি...বকাবকি...
সাউথ সিটির অফুরন্ত সিটিং...মিটিং... এর মাঝে হঠাতই কে যেন ছড়িয়ে দিল পায়ের তলায় সর্ষে।
সকাল দশটা দশের শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে ছাড়লো ঘড়ির কাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে। বছরের শেষ দিনে এক লু মাখা দুপুরে আমরা বোলপুর স্টেশনে নামলাম।
রিক্সা নিয়ে যত এগোতে থাকলাম অসংখ্য গাছ আমাদের ঢেকে দিতে থাকল তাদের তাদের অসংখ্য শাখা-প্রশাখার বিস্তৃতি নিয়ে।
রিক্সা নিয়ে যত এগোতে থাকলাম অসংখ্য গাছ আমাদের ঢেকে দিতে থাকল তাদের তাদের অসংখ্য শাখা-প্রশাখার বিস্তৃতি নিয়ে।
কুরচি ফুলের গন্ধে ঘেরা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পেলাম সেই খবর। “আজ সন্ধ্যাবেলা কাঁচঘরে তোমরা সবাই এসো। পুরোনো বছরকে বিদায় জানাবো আমরা।”
এর আগে শান্তিনিকেতনে যতবার এসেছি...সবটাই কাজে...শ্যুটিং-এ...কোনো বন্ধুর সাথে সাক্ষাতে।
এবারো একটা গুরু দায়িত্ত্ব আছে। তার কথা বারবার স্মরণ করিয়েছে চাঁদের বুড়ি। ইচ্ছে আছে ইচ্ছামতীর পালে কিছু কুরচি ফুল উপহার দেওয়ার।
ওদিকে সবাই একে একে আস্তে শুরু করেছেন উপাসনা মন্দিরে। কাঁচঘরে। জমায়েত হচ্ছেন।
ভারী সুন্দর লাগছে সন্ধ্যাটা। এইভাবে এর আগে আমি কোনোদিন এইরকম অনুষ্ঠানে যোগ দিইনি। বন্ধুরা বসন্ত উতসবে দল বেঁধে গেছে, আমি দূরে সরে থেকেছি ভিড়ের অজুহাতে। ওই চারিদিকে প্রচুর লোক, নিঃশ্বাস বন্ধ করা পরিস্থিতি আমাকে ভয় দেখিয়েছে... দূরদর্শনে তার লাইভ টেলিকাস্টে সন্তুষ্ট থেকেছি।
শুরু হল গান, তার সাথে পাঠ। যাঁরা এসেছেন...অংশ নিচ্ছেন তাঁরা বেশিরভাগই আশ্রমিক, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা আর আমাদের মত হঠাত কুরচি ফুলের কাছ থেকে খবর পাওয়া ট্যুরিস্ট।
“এই যে...শুনছেন...সারাক্ষণ যে লম্ফ-ঝম্প করে ছবি তুললেন...তা কোন কাগজের আপনি?”
এক বয়স্ক ব্যক্তি। এস্রাজ বাজাচ্ছিলেন পিছনের সারিতে বসে।
না...আমি কোনো কাগজের নই। ঘুরতে এসেছি...তাই...
এক বয়স্ক ব্যক্তি। এস্রাজ বাজাচ্ছিলেন পিছনের সারিতে বসে।
না...আমি কোনো কাগজের নই। ঘুরতে এসেছি...তাই...
“বুঝেছি... এই কাগজটা রাখুন। অনুষ্ঠান সূচী।”
চলে গেলেন এস্রাজ ঘাড়ে করে, অন্ধকারে গাছগাছালির মধ্যে দিয়ে। আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম কাঁচঘরের সিড়িতে।
চলে গেলেন এস্রাজ ঘাড়ে করে, অন্ধকারে গাছগাছালির মধ্যে দিয়ে। আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম কাঁচঘরের সিড়িতে।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়নি। একটু দূরে ছিলো আমাদের আস্তানা। রিক্সা বলা ছিলো। মোবাইলে এলার্ম ঠিক সময়ে বাজলো। আর সামনের রাস্তাটা গরমের সকালে কৃষ্ণচূড়ার রঙে ভরে উঠলো।
উপাসনা মন্দিরে তখন সবাই গলা মেলাচ্ছে... “যাত্রী আমি...”।
পাঠ আর গানের মধ্যে নতুন বছরকে সবাই স্বাগত জানালো। ভিড় নেই...লাইভ টেলিকাস্ট নেই...মারামারি...মাতলামো নেই...না মাপ করবেন যে অর্থে ঠিক বিশুদ্ধ রাবিন্দ্রিক পরিবেশ অনেকে খোঁজেন তাও নেই।
পাঠ আর গানের মধ্যে নতুন বছরকে সবাই স্বাগত জানালো। ভিড় নেই...লাইভ টেলিকাস্ট নেই...মারামারি...মাতলামো নেই...না মাপ করবেন যে অর্থে ঠিক বিশুদ্ধ রাবিন্দ্রিক পরিবেশ অনেকে খোঁজেন তাও নেই।
তাহলে কি আছে?
আছে এক অপার আনন্দ, এক পরম প্রশান্তি।
এখানেই তো এক সময় অনেক অনেক দিন আগে কবি বসতেন, বরণ করতেন নতুন বছরকে। এখানেই তো পাঠ করেছেন তাঁর সেইসব বিখ্যাত প্রবন্ধ। আজ যা তাঁর রচনাবলীতে ঠাঁই করে নিয়েছে।
সবাই তার নিজের খুশিতে...নিজের মনে গলা মেলাচ্ছে...যে ছেলেটিকে গত সন্ধ্যায় শতরঞ্চি তুলতে দেখেছি...সে আজ কি সুন্দর গান গাইছে।
অনুষ্ঠান শেষ। এবার সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়। প্রণাম।
যে যার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আম্রকুঞ্জে...এই সকালটার একটু আনন্দও তারা ছাড়বে না।
যে যার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আম্রকুঞ্জে...এই সকালটার একটু আনন্দও তারা ছাড়বে না।
সেই তো কবে থেকে বছরের প্রথম দিনে আশ্রমিকরা কবিগুরুর জন্মদিন পালন করে আসছেন। হ্যাঁ আজো তার নড়চড় হলো না। পাঠ ভবনের সবাই মিলে কি সুন্দর একটা অনুষ্ঠান উপহার দিলো।
এরপর আমাদের একটা প্রচন্ড ক্ষিদে পেলো। আমরা রতন পল্লীতে ছুটলাম ব্রেকফাস্ট করতে। আলচাতে গিয়ে বসার জায়গা পেলাম। আর কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের সামনে ঠিক ভূতের রাজার বরে পাওয়া ডিশ গুলো যেন সুপার ইম্পোজিশানে উড়ে এসে জুড়ে বসে থাকতে লাগলো। এরপর থেকে মধুবাতা ঋতয়তের যেন যথার্থ উপলব্ধি করতে পারলাম।
পেট ভরে আলচার নানা রকমের খাবার খেয়ে আমরা গেলাম খোয়াই।
গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকলাম। চোখে পড়লো বাড়ি গুলো। আর কোথাও যেন এক অদ্ভুত ভালো লাগা আমাদের ঘিরে ধরতে লাগলো।
সন্ধ্যাতে অনুষ্ঠিত হলো বাল্মিকী প্রতিভা।
দস্যু রত্নাকর থেকে বাল্মিকীতে উত্তরণ। কবির জীবনের প্রথম দিকের লেখা। যার অতি সুন্দর আর নাটকীয় উপাখ্যান রচনা করেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর প্রথম আলো উপন্যাসে।
যারা নাচলো, গাইলো, অংশগ্রহণ করলো তারা আমার থেকে বয়সে অনেক অনেক ছোট। কলকাতায় এর আগে আমি একবার মাত্র বাল্মিকী প্রতিভা দেখে ছিলাম, ভালো লাগেনি। কেবলমাত্র "কেন প্রাণ কেন কাঁদে রে"...যখন ঋতুপর্ণ এক অন্য প্রেক্ষিতে চোখের বালিতে ব্যবহার করেন তখন তার প্রয়োগের কৌশলে মোহিত হয়েছিলাম, এইটুকুই। কিন্তু আজকের পরিবেশ কি অসাধারণ। আজকের এই উপস্থাপনা পরম সুন্দর।
কোথাও যেন এই পরিবেশ...এই সন্ধ্যা...ওই আশ্রমিকরা আমার এই পঁয়ত্রিশ বছরের জীবনে আরো একটা নতুন বছরের সূচনা করলো... অবশ্য এবারের শুরু একটু অন্যরকম ভাবে।
সবাই ভালো থাকবেন।
শুভেচ্ছা রইলো।
i hav never been to Santiniketan..but reading this piece by kallolda,i feel like i hav been there before,and i want to go there very badly...pictures are relevent,amazing kallolda
উত্তরমুছুন