রামকুমার চট্টোপাধ্যায়

রামকুমার চট্টোপাধ্যায়
বাবা চেয়েছিলেন ছেলে ডাক বিভাগের কর্মী হোক গুন-গুন করে গান করা পর্যন্ত পছন্দ করতেন না আর দাদু চাইতেন নাতি তাঁর মতো টপ্পা গায়ক হোক জোর করে ধরে বেঁধে বসাতেন রেওয়াজ করানোর জন্য কত চেষ্টা করতেন ছেলেটাকে টপ্পা শেখানোর কিন্তু ছেলের সেদিকে মন নেই...শুধু তবলা বাজাবে সে এর অনেক দিন পরে সেই ছেলেই টপ্পা গাইবে আর লোকে বলবে," ওই দেখ টপ্পা গায়ক রামবাবু যাচ্ছেন"

গত বছর জুন মাসের এক দুপুর বেলায় এই স্মৃতিপথ রেখা ধরে হাঁটছিলেন তিনি আর আমাদের ক্যামেরা তা রেকর্ড করছিলো আমরা শুনছিলাম গহরজানের কথা...আমরা শুনছিলাম দাদাঠাকুরের কথা...কবি-গায়ক নজরুল এসে দখল করছিলেন আশি পেরোনো এক মানুষের স্মৃতিকে আর বার বারই সিগার ধরিয়ে আসর মাত করছিলেন রামকুমার চট্টোপাধ্যায় আসলে আমরা শ্যুট করছিলাম কলকাতা গান (Kolkata Gan) নামের একটা টেলিভিশন সিরিজ আমরা জানতে চাইছিলাম সেইসব প্রবীণ ব্যক্তিত্ত্বের কাছে...সেই সব মহীরুহের কাছে...কেমন ছিল তাঁদের সময়কার সেই সময়? কেমন দেখছেন এই প্রজন্মকে, এখনকার গানকে? এই শহর তাঁদের কতটা দিল আর কিই বা নিল তার হিসেব নিকেষ প্রত্যেকে বলেছেন তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা প্রত্যেকে বলেছেন তাঁদের ভালোলাগা ও ভালোবাসা এই শহরকে ঘিরে আমাদের কলকাতা গান সমৃদ্ধ হয়েছে অনেকে অনুষ্ঠানটি দেখেছেন আবার অনেকে দেখেননি কিন্তু সেদিনের সেই দুপুরের এক অনবদ্য স্মৃতি আমার মনে চিরকাল থেকে গেল আমি এক শতাব্দীর গান শুনলাম আর আমাদের ক্যামেরা নিরীক্ষণ করলো সবকিছু
আজ সকালে খবরের কাগজ খুলতেই চোখে পড়লো সংবাদটা "রামকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন" বেশ কিছু এলোমেলো অথচ জরুরী তথ্য আমার মনে পড়তে থাকলো যে গুলো একজন মহীরুহকে চেনার জন্য আবশ্যকীয় না হলেও প্রয়োজনীয় বলে মনে করি

উত্তর কলকাতার দর্জিপাড়ায় ১৯২১ সালে রামকুমারের জন্ম ছোটবেলা থেকেই লেখা পড়ার চেয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন গানে লিখতে বসে প্রথমেই যে কয়েকটা ঘটনার কথা উল্লেখ করেছি তবলা দিয়ে সঙ্গীতের জীবন শুরু করলেও গানের জন্যই তিনি আস্তে আস্তে প্রচারের আলোয় আসতে থাকেন খেয়াল, ঠুমরী, দাদরা, গজল প্রভৃতি গাইলেও বাংলা টপ্পা, পুরাতনী আর পুরোনো কলকাতার বৈঠকি গানের সঙ্গেই বিশেষ ভাবে জড়িয়ে আছে রামকুমারের নাম দাদুর বন্ধু, চন্দননগরের তেলিনিপাড়ার জমিদার টপ্পা গায়ক জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে কালো বাবুর কাছে প্রথমে কিছু পাঞ্জাবি ও বাংলা টপ্পা শেখেন দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে নিধুবাবুর টপ্পা বিশেষ মাত্রা পেয়েছে যদিও তাঁর প্রথম রেকর্ড টপ্পা নয়, আধুনিক গানের প্রণব রায়ের কথায় আর কমল দাশগুপ্তের সুরে "শুধু জাগিতে এসেছি রাতি" তাঁর প্রথম রেকর্ড তারপর অনেক রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন স্ত্রীর পত্র ছবির তাঁর চলে যাওয়া মানে একটা শতাব্দীর গানের ইতিহাসের অবসান হওয়া কিন্তু তিনি রেখে গেছেন আমাদের জন্য অনেক কিছু আমাদের সেই টেলিভিশন তথ্যচিত্রটি ২০ মিনিটের হলেও...সেটাও আমাদের এক বড় পাওয়া কারণ সেই দুপুরে তিনি ফিরে দেখছিলেন তাঁর সময়কে...তাঁর গানকে...যাদের মধ্যে তিনি অমর হয়ে থাকবেন

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা গুলি