Endangered
দিনের বেলায় ভিড়ে ঠাসা পুরীর সী বিচে (Puri sea beach) একটা কচ্ছপকে (turtle) দেখতে পেয়ে বেশ অবাকই হয়েছিলাম। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখি সেটি মৃত।
মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। কাছাকাছি কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম কোথা থেকে এলো এই কচ্ছপটি...কিভাবে মারা গেল? কেউ কিছু বলতে পারলো না। সী-বিচে টহলদারী পুলিশকে গিয়ে বললাম,“একটা মরা কচ্ছপ...বেশ বড়...আসলে এগুলোতো endangered।” পুলিশটি আমার দিকে কিছুক্ষণ ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বল্লেন,“ঘুরতে এসেছেন ঘুরুন...মজা করুন...এই সবের মধ্যে যাবেন না।”
এটা আমার প্রথম পুরী ভ্রমণ। এর আগে অনেকের মুখে শোনা গল্প আর তাদের তোলা ছবি দেখে আমার পুরীর সাথে পরিচয়। কিন্তু এই প্রথম এসে কি দেখলাম আমি? ২০ থেকে ২৫ ডিসেম্বর,২০০৮ আমার কাছে স্মরণীয়। কারণ প্রতিদিন সী-বীচে গিয়ে আমি দু-তিনটে করে কচ্ছপ মরে পড়ে থাকতে দেখেছি।
এমনকি রাতেও...
কিভাবে মরে এরা? না কোনো প্রাকৃতিক কারণে নয়। আমরাই মেরে ফেলি এদের...মেরে ফেলি নিজেদের স্বার্থে...ভালোভাবে চোখের দিকে নজর রাখুন...কিছু দেখতে পাচ্ছেন কি? অসীম শূন্যতা...না আরো কিছু?...
এক স্থানীয় মানুষ জানালেন কি ভাবে এদের মারা হয়। গভীর সমুদ্রে বড় বড় জালের মধ্যে মাছের সাথে উঠে আসে এই বিশালাকার বিরল প্রজাতির কচ্ছপগুলো। মাছ গুলোর সাথেই এদের নৌকোতে তোলা হয়। তারপর যেটা হয় সেটা ভয়ানক...। মাছগুলোর থেকে এদেরকে আলাদা করার জন্য তখন এদের পিঠের ওপরের খোলে লোহার ভারী বেলচা বা ওই জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। যন্ত্রণাতে বেরিয়ে আসে খোলসের মধ্যে ঢুকে থাকা ভয় পাওয়া মুখটা। তারপর সেই নরম মাংসালু মুন্ডুটায় চোখটাকে লক্ষ্য করে গেঁথে দেওয়া হয় লোহার বড়শি...তারপর ফেলা হয় সমুদ্রে। ছটফট করতে করতে মরে যায় কচ্ছপগুলো। তারপর কোনো এক সময় সমুদ্রের পাড়ে ফিরে আসে কুকুরের খাবার আর আমাদের ছবির বিষয় হিসাবে।
আমি চুপ করে শুনেছিলাম গল্পটা। যিনি বলছিলেন তিনিও মাছ ধরেন। সত্যি-মিথ্যে বিচারের দিকে আমি যাইনি। পরের দিন যে কচ্ছপটা আবার পাড়ে এসে ঠেকলো তার চোখের দিকে তাকালাম শুধু। আমার ক্যামেরা ক্লিক করলো...। আর কিছুই করতে পারিনি আমি...আমার আর কিছু সেই মুহূর্তে করার ছিল কিনা নিজেও ঠিক বুঝতে পারিনি...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন