সুপার বয়েজ অফ মালেগাঁও


 ভারতীয় সিনেমায় সত্য ঘটনা অবলম্বন করে অনেকেই ছবি নির্মাণ করেছেন। কিন্তু সত্য ঘটনার ওপর নির্ভর করে একটি নির্মিত তথ্যচিত্রের কাঁধে ভার রেখে কাহিনী চিত্র হয়তো বিরল। আমার অন্তত জানা নেই। সুপার বয়েজ অফ মালেগাঁও দেখতে বসে এটা বার বার মনে পড়ছিল।

যদিও এর বহুদিন আগে মালেগাঁও কি সুপারম্যান যখন আমরা সবে এর কাছ থেকে জেনে, তার পাঠানো টোরেন্টের লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে দেখেছিলাম তখন আশ্চর্য হয়েছিলাম বিষয়বস্তু, তার নির্মাণ এবং চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা দেখে (তথ্যচিত্রের ভিতরে এবং বাইরে যারা কাজ করেছেন উভয়পক্ষ)। ফলে ভারতের সিনেমাপ্রেমী মানুষদের কাছে তথ্যচিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। উঠে এসেছিল আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। অনেক পুরষ্কারও পেয়েছিল। এক হালকা হাসির আমেজে প্রচন্ড এক ইমোশানের নজির সৃষ্টি করেছিল সেই সময় তথ্যচিত্রটি। এক ধরনের স্যাটায়ার যেটা সচরাচর দেখা যায় না এদিকের ছবিতে। সমাজের মধ্যে আর এক সমাজের প্রতিফলন। ক্যামেরার মধ্যে আর এক ক্যামেরা। স্টারের সামনে বিকল্প এক প্রান্তিক স্টার। স্বপ্নের মধ্যে আর একটা বুনে দেওয়া স্বপ্ন।
সমাজের খেটে খাওয়া একদম নীচু তলার মানুষেরা যখন নিজেরাই নিজেদের গল্প বলতে বসেন সিনেমায় তখন কেমন হয়? হাতে টাকা নেই। তেমন ক্যামেরা নেই। অভিনেতা অভিনেত্রীরা সেই সবজীওয়ালা, কারখানার শ্রমিক, দর্জি কিম্বা চায়ের দোকানের মালিক। পরিচালক বিয়েতে ভিডিও তোলা ক্যামেরাম্যান। বিষয় কোনো বিখ্যাত জনপ্রিয় ছবির আঞ্চলিক ভার্সান। নিজেদেরই ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে নিজেদের নিয়েই হাসা। কাজটা খুব কঠিন। আর সেই কঠিন কাজেই মেতে উঠেছিল কয়েকজন সিনেমা করার নেশায়। মালেগাঁওয়ের একটা ছোট্ট প্রান্তে। তারপর যেটা ঘটেছিল সেটা ম্যাজিক। সেটা গল্প। এতোদিন পরে ফিরে তাকানোর অজুহাতও।
মুম্বাইয়ের কয়েকজন তরুণ তথ্যচিত্র নির্মাতা মালেগাঁওয়ের কয়েকজন উৎসাহীর একটা ছবি নির্মাণকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছিলেন মালেগাঁও কি সুপারম্যান। তাও তো প্রায় সেই দুহাজার আটের কথা। আর এই দুহাজার পঁচিশে এসে সুপার বয়েজ অফ মালেগাঁও যখন মাল্টিপ্লেক্সে গিয়ে দেখতে বসি তখন যেন বারে বারে সেই তথ্যচিত্রটাই চোখের সামনে ভাসে। জনমানবহীন, দর্শকশূণ্য হলে পর্দায় বড় বড় নামের ঝলকানি থাকা সত্ত্বেও (ক্যামেরার সামনে এবং পেছনে) সুপার বয়েজ অফ মালেগাঁও মনে দাগ কাটলো না কেন? ইমোশানের জন্য অহেতুক ফ্যামিলি ড্রামার আশ্রয় নেওয়ায় ছবির শেষে চোখ ভিজে এলেও, রাতে বাড়ি ফেরার পথে আস্তে আস্তে হারিয়ে গেল কেন ছবিটা মন থেকে? চোখের ওপর উজাড় হয়ে রইলো শুধু কবেকার সেই তথ্যচিত্রটি। সেই হাড় গিলগিলে মানুষগুলো। সেই ঘিঞ্জি নোংরা শহর। আর কয়েকটা মানুষের স্বপ্ন। না সেখানে কোনো চরিত্র এগিয়ে এসে তাদের বিদ্যে জাহির করেনি। প্রয়োজন পড়েনি। এখানেও কি খুব দরকার ছিল? পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব গুলো অন্যরকম ভাবেও আসতে পারতো। চেনা ছক দিয়ে হাঁটলেই সব ছক যে মিলে যাবে তেমনটা তো নয়। অনেকবারই সেটা প্রমান করেছে সিনেমা। এবারও করলো। হয়তো একটু বেশি প্রত্যাশা নিয়েই গিয়েছিলাম জোয়া আখতারদের কাজ দেখবো বলে। তাদের অন্যান্য কাজের ভালোলাগা এবং ভালোবাসার একটা লম্বা রেকর্ড আছে যে।
এই ছবি কিছুদিন পরেই এ্যামাজন প্রাইমে চলে আসবে ঠিকই। বাড়ির ল্যাপটপে, ফোনে, স্মার্ট টিভিতে দেখা যাবে। তবুও সিনেমা পাগোল অত্যাশ্চর্য কিছু মানুষকে দেখতে হলে বড় পর্দায় যেতে এখনও ভালো লাগে। মনে হয় দল বেঁধে যদি সবাই দেখতো ছবিটা। আর তার সাথে আমাদের ছবি দেখার খরচ মাল্টিপ্লেক্সে যদি একটু কমতো। টিকিট, খাবার-দাবার সব কিছু নিয়ে। খুব কী ক্ষতি হতো? কে জানে?

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা গুলি