একুশে


আমাকে আর দাদাকে শোনানো হতো মধ্যরাতের সেই গল্প।

তিন মহিলার সীমানা পেরোনোর দুঃসাহসিক অভিযান।

আমাকে আর দাদাকে বসিয়ে দেওয়া হতো এক না দেখা না জানা সময়ের মধ্যিখানে।

চোখের ওপর বোলানো হতো সেই আশ্চর্য রঙের তুলি-

মাড়াই ভরা ধান, গোয়াল ভরা গাই, ফলসা গাছের তলায় মেঘ ঘনিয়ে আসার সিনারি।

দাদা আঁকতো মন দিয়ে, প্যাস্টেল কালার ঘষে ঘষে।

ছবি দেখে বাবা হাসতেন।
মা যত্ন করে রেখে দিতেন পুরোনো কাগজের মাঝখানে।

নরম হয়ে আসা আলোয় লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে ঠাম্মা খুঁজতেন দেশের মাটি।

ঠিক একই ধারাপাতে বালীর বাসায়, নোনা ধরা দেওয়ালে চলতো এগারোটা মানুষের দিন যাপনের চিত্র।

কোনো এক মাঘের শেষ শীতে, লোড শেডিং এর রাতে, হ্যারিকেনের আলোয় বাবা খুলে বসতেন একটা চটি বই।

তাঁর ক্ষয় রোগ ধরা শরীরের গভীরতা থেকে দৃপ্ত ভঙ্গিতে পড়তেন, না শুধু পড়তেন না বলা ভালো মন্ত্র মুগ্ধের

মতো উচ্চারণ করতেন-"বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে..."

ঠিক তখনই ঠাম্মার খাওয়া থেমে যেত।

পিসি রান্নাঘরের লম্ফ নিভিয়ে এক চিলতে উঠোনে এসে বসতেন।

নিঝুম হয়ে থাকতো মানুষ গুলো।

জোছনার আলোকিত ভুবনে আমি দেখতাম তাদের চোখে করুণাধারা।

আমি জানতাম, ঠিক জানতাম, ওখানেই কোথাও হয়তো লুকিয়ে আছে আমার তেপান্তর।

ওখানেই ইন্দুবালা মনিরুলের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কপোতাক্ষের ধারে।

গোরা নকশাল বুনে চলেছেন শেষ না হওয়া এক আশ্চর্য স্বপ্ন।

বাবার ইয়াশিকা ছবি তুলছে আপন মনে ক্লিক ক্লিক ক্লিক।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা গুলি