আর কোনোখানে

 

মেখলার বইয়ের তাক থেকে নিয়ে এসেছিলাম নতুন বইটা। পাতায় তখনও পাঠকের হাত না পরা আড়ষ্টতা। নতুন ছাপার গন্ধ। এর অনেকদিন আগেই যদিও পড়া হয়ে গেছে পাকদন্ডী। হলদে পাখির পালক। পদিপিসির বর্মিবাক্স। টংলিং। ঠাকুমার ঠিকুজি। ঘর সাজানোর বই। রান্নার বই। ভূতের গল্প। বড়দের উপন্যাস আরও কতকি! সে লিস্টি বাপু মনে থাকে না। করতেও চাই না। তবে একথা ঠিক এখন তো কেউ বলতে পারবে না লীলা মজুমদার হাতের কাছে নেই। পাওয়া যাচ্ছে না। বরং কলেজস্ট্রিট বই পাড়াতে আলমারি ভর্তি হয়ে আছেন তিনি। যেমন ছিলেন আমার বাবার সেই কবেকার পুরনো কাঠের বাক্সতে। যেখান থেকে আমি আর দাদা আবিষ্কার করেছিলাম প্রথম পদিপিসিকে। গরমের ছুটিতে বর্মি বাক্সকে নিয়ে সে যে আমাদের কি চিন্তা ভাবনা। হলদে পাখির পালক খুঁজতে গঙ্গার ধারে বুড়ো বট গাছের নীচে সে যে কি প্রানপণ তল্লাশি।

এই বইয়ে অবশ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শিলং এর মন কেমন। একটা ছোট্ট পাহাড়ি শহরে ভাইবোনদের মধ্যে বড় হয়ে ওঠা আমাদের গল্পের ঠাকুমা। যিনি বাঙালিকে এবং তার লেখককুলকে অন্তত এইটুকু শেখাতে পেরেছিলেন শান্তি আসলে মনের মধ্যে না থাকলে সেটা লেখায় প্রতিফলিত হয় না। জীবনেও না। এক অপার শান্তি পাওয়া যায় তাঁর লেখায়। এক আপাদমস্তক ভালোলাগা আর মায়া দিয়ে তিনি বোনেন সব কিছু। শৈশব, কৈশোর, যৌবন। শিলং শহর। কলকাতা। দার্জিলিং। শান্তিনিকেতন। রবীন্দ্রনাথ যখন মাত্র চব্বিশ বছরের মেয়েটিকে নেমনতন্ন করেন শান্তিনিকেতনে পড়াবার জন্য তখন সে আনন্দে অভিভূত। বাবার তেমন পছন্দ ছিল না। আবার বারণও করেননি। মেয়েটি যে শুনতো তেমনটাও নয়। কারণ তার আগেই যে ইংরাজি সাহিত্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ তে দিতীয় স্থান পেয়েও চলে গেছেন ছোট্ট একটা স্কুলে চাকরি নিয়ে দার্জিলিং, শুধু একা থাকবেন, সাবলম্বি হবেন বলেই। তাকে কি আটকানো যায়? না রবীন্দ্রনাথও পেরেছিলেন তাঁকে আটকে রাখতে? মাত্র নয় মাস ছিলেন সেখানে। তারও অনেক পরে সেইসব দিন যখন ফিরে দেখবেন তার বইয়ের নাম হবে ‘আর কোনোখানে’। কেন হবে? সেটা হয়তো পড়লে বোঝা যাবে।

এই বইয়ে ছেয়ে আছে একটা মেয়ে যে একদিন লিখবে অনেক কিছু। ছেয়ে আছে তার বিস্ময় ভরা চোখে দেখা একটা পাহাড়ি শহর। সাহেবের, স্বদেশি আমলের কলকাতা। সন্দেশ নামের একটা পত্রিকা। সুকুমার রায় নামের একটা মানুষ। রবীন্দ্রনাথের মতন বোধিবৃক্ষ। তেমনই বিখ্যাতদের পাশাপাশি ছেয়ে আছেন অসংখ্য অজানা অনেক মানুষ। যাদের চিরায়ত ছায়ায় পুষ্ট হয়েছে বাঙালির জীবনবিক্ষা। তাই এই সময়ে এই আবহে পেছনের পথটা বিস্মরণের আগে আরেকবার যদি তার দিকে ফিরে তাকানো যায়। মনে মনে যদি সমস্বরে বলা যায় হেথা নয়…হেথা নয়…। তাহলে কি আর কোনোখানে নতুন দরজা খুলবে? জানি না।

আপনাদের জানা থাকলে অবশ্যই জানাবেন।

বইটা প্রকাশ করেছেন মিত্র ও ঘোষ।    


মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা গুলি