বাদামী হায়নার কবলে
একটা বিষণ্ণ শহর।
একজন হারিয়ে যাওয়া গোয়েন্দা।
একজন ততোধিক বিস্মৃতপ্রায় লেখক।
এই চারটি প্রবাহে একটি ছবিকে নির্মাণ করতে চেষ্টা করেছেন লেখক, পরিচালক দেবালয়।
শুধু কি এই কয়েকটি উপাদান? না মোটেই না। কবেকার এক ষাটের দশকের ফরাসী নব্যতরঙ্গের ভাষাকে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন পরিচালক। মনে করাচ্ছেন আশির দশকের আমেরিকান পাল্পের ভাষাকে। গ্রাফিক্স নভেল উঁকি মারছে কখনও। কিম্বা ঝাঁপ দিচ্ছেন পর্দা জুড়ে ইন্সটলেশানে। বাঙালির টেকচাঁদ ঠাকুর, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ কিম্বা পরশুরামের মতো শ্লেষও কি আচ্ছন্ন করে থাকছে না প্লট জুড়ে? সংলাপে?
থাকছে।
সঙ্গে সঙ্গত করে চলেছেন রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে মোহিনী চৌধুরী, কীর্তন এমনকি দেবালয়ের লেখা একাধিক গান। সঙ্গীত এই ছবির একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র শুধু নয় একটা ভাষা। যে ভাষা এই ছবিকে লালন পালন করে। এগিয়ে নিয়ে যায়। কোনো এক বিষণ্ণ ধাপার মাঠে আছড়ে ফেলে। কিম্বা কবেকার এক পুরনো সিমেট্রিতে ডুয়েল লড়ায়। চিত্রনাট্যের মেলোড্রামাটিক প্লটকে জমাট বাঁধতে দেন না পরিচালক অসংখ্যবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও। তারচেয়ে বিযুক্তিকরণ করেন নানা রকমের সিনেমাটিক এলিমেন্ট দিয়ে। সহজ দেখানো পথে হাঁটতে তিনি অভ্যস্ত নন। আর ঠিক এখানেই মারাত্মক ঝুঁকি নেন দেবালয়। যে চিত্রভাষায় বাঙালি দর্শক এই মুহূর্তে লালিত পালিত তাকে ভেঙেচুরে ছুঁড়ে ফেলেন। বলা যায় অস্বীকার করেন। এই যাপন যদিও তাঁর আজকের নয় বহুকালের। তাঁর ছবির ভাষা সত্যিই বাংলা ছবির এক নতুন গন্তব্যের দিকে যেন এগিয়ে যাওয়া। এক অন্য স্পেসে দাঁড়াবার বিনির্মাণ। এইসব কারণেই দেবালয় তাঁর সমসাময়িক অন্যান্য সতীর্থদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। একা এবং নিঃসঙ্গ। তাই হয়তো ব্যতিক্রমী।
বুকে সাহস থাকলে। মনে জোর থাকলে। একটা নতুন কিছু দেখার ইচ্ছে করলে। একটা অন্য ভাষায় অবগাহন করতে চাইলে। নিজের এবং সমষ্টির বৌদ্ধিক চর্চাকে প্রণিধান যোগ্য মনে করলে ‘শ্রী স্বপনকুমারের বাদামী হায়নার কবলে' দেখুন এবং দেখান।
ব্যাস এইটুকুই। আর কিছু নয়।
যাঁরা এই ছবি নির্মাণে সাহস দেখিয়েছেন, লগ্নি করেছেন বাঙালির এই অবেলায় তাঁদের সবাইকে আমার প্রণাম ও শ্রদ্ধা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন