ঠিকানা লেখা নেই_৬

 

হেমন্তের কেমন রঙ আমি জানি না। কোনোদিন হেমন্তকাল বুঝতে পারিনি। গঙ্গার ধারে বেড়ে ওঠা স্বত্বেও। ঝুপ করে মা দুর্গা জলে পড়ার পরেই চারিদিকে কেমন নিঝুম নীরবতা চলে আসতো। ভোরে গায়ের ওপর চাদর টেনে নিলে আরাম হতো। বাড়ির ছোট্ট মিনিটা মশারির ওপর গুটিশুটি মেরে ঝুলতো। বিছানার মধ্যে টেনে নিলে আনন্দে গলার মধ্যে গড়গড় আওয়াজ করতো। এক চিলতে রোদ পাঁচিল টপকে দরজার কাছে পড়লে বাবা সেখানে বসে খবর কাগজ পড়তেন। বিজয়ার কেউ প্রণাম করতে আসলে তাকে দেওয়া হতো বাড়িতে ভাজা কুচো নিমকি, নাড়ু আর চন্দ্রপুলি।
যাদের নিজেদের বাড়ি ছিল তারা টেলিভিশনের এন্টেনার থেকে আরও লম্বা বাঁশে একটা ছোট্ট নাইট বাল্ব লাগাতো। একে বলতো আকাশ প্রদীপ। সারা রাত বিশাল আকাশের নিচে ওরা টিম টিম করে জ্বলতো। পূর্ব পুরুষদের মানে আজ যাঁরা বেঁচে নেই তাদের নাকি আলো দেখানো। তাদের বাড়ি যাতে চিনতে না ভুল হয়ে যায়। জ্ঞাতি গুষ্টিরা কেমন আছে যেন তাঁরা সবাই দেখতে পান। উত্তরসূরি বলে কথা।
তাহলে আমরা কেন আকাশ প্রদীপ দিই না। দাদা চোখ গোল গোল করে বলেছিল, আমাদের কি আর ছাদ আছে? না নিজেদের বাড়ি?
সত্যিই তো তাহলে? আমাদের পূর্ব পুরুষরা কিভাবে জানবেন আমরা কেমন আছি? মনি বলেছিল ঠিক জানবে যখন চোদ্দ প্রদীপ দেওয়া হবে তখন। আমার কাছে হেমন্তের আলো মানে কারেন্ট অফের রাতে মৃদু আলোয় জ্বলতে থাকা হয়তো সেই প্রদীপ গুলো।
মা কালি যেই না ঝুপ করে গঙ্গায় পড়লো বাজার আলো করে আসতো কতবেল। পেঁয়াজকলি। কচি কচি ঘন সবুজ রঙের সিম। উত্তরে হওয়া বইতে শুরু করলে আমাদের বাসার লেপ তোষক পাড়া শুরু হয়ে যেত কুলুঙ্গি থেকে। তাদের রোদে দেওয়া হত। যে আলোটা চারপাশে ঘুরঘুর করতো সেটাই কি হেমন্তিকা?
যে আলোয় স্নান করতে ভালোবাসতেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়? না হলে এতো মন কেমন করা লেখা লিখলেন কি করে?
যাইহোক এই ভর বেলায় অফিস যাওয়ার পথে আপনাদের সবাইকে আমার সেই দেখা কিংবা না দেখা হেমন্ত আলোর শুভেচ্ছা। ভালো থাকবেন সক্কলে।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা গুলি