ঠিকানা লেখা নেই_৫


 এই মুহূর্তে পৃথিবী হিংসা দীর্ণ। প্রত্যেকটা দেশের রাষ্ট্র নায়করা তাদের লোভের জিভ কিভাবে বের করে লালায়িত করছে দেখছে গোটা বিশ্ব। হাতে গোনা কয়েকটা কর্পোরেট নির্ধারিত করছে আমরা কখন বিপ্লব করবো। কখন অসুস্থ হবো। কখন প্রিয় সুজনের পিঠে বসিয়ে দেবো ছুড়ি। কখন হাসবো। কখন কাঁদবো। কোন মুহূর্তে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দেবো নিজেকে। ঠিক সেই ইঁদুর দৌড়ের লোভ-লালসা-পাপকে এক্কেবারে হাতের মুঠোয় এনে ধরেছেন মাইক ফ্ল্যানাগান তাঁর নতুন সিরিজে। এবারে চিত্রকল্পের আধার আঠেরো শতকের এডগার এ্যালেন পোর গল্প। তাঁর শক্তি তিনি শুধু ভৌতিক নন। আগাগোড়াই দার্শনিক। কেন? তাঁর কাজ আগে যাঁরা দেখেছেন ঠিক জানেন। ভূত মাধ্যমটা যেখানে আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশ নিয়ে যায় রক্তারক্তি, তন্ত্র মন্ত্র, নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করে জম্বির জায়গায় সেখানে তিনি এক অন্য চিত্রভাষাকে সামনে আনেন।

ঠিক কীভাবে? যেভাবে মানুষ লোভ করে। ফিরে যায় স্মৃতির পথে। একটা বাড়ি জীবন্ত হয়ে ওঠে গল্প শোনাবে বলে। কিম্বা একটা দ্বীপ শুধু অপেক্ষা করে কবেকার এক হারিয়ে যাওয়া ফাদার ফিরে আসবেন সবাইকে নিজের নিজের মনস্কামনা পূরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য। কিম্বা কলেজের প্রথম বছরের ছাত্রী তার শেষ ক্লিনিকাল হোমে গিয়ে আবিষ্কার করবে বেঁচে থাকা আর না থাকার হাজারো গল্প। মৃত্যুর মুখোমুখি সে নাকি আমরা? নাকি যে গল্পটা হয়ে চলেছে সেটা আগে কেউ কোনোদিন কোনোভাবে শুনিয়ে গিয়েছিল কাউকে। আমরাই শুধু হারিয়ে ফেলেছিলাম। মনে রাখিনি।
গত কয়েক বছরে মাত্র পাঁচটা সিরিজ করে চমকে দিয়েছেন পরিচালক। তাঁর কয়েকটা ছবিও আছে। সেগুলোর কথা নাই বা বললাম। তবুও তাঁর কাজ দেখার জন্য মুখিয়ে থাকি এই কারণেই যে তিনি আর সবার থেকে আলাদা। হ্যাঁ একেবারেই লাইনের বাইরে। লং টেক। দীর্ঘ সংলাপ। চার্চের প্রেয়ার। গোটা পৃথিবীর ধর্ম সংকট। আস্থা। বন্ধুত্ত্ব। সম্পর্ক। ভালোবাসা। কান্না। এইসব কিভাবে একটা ভূতুরে সিরিজে নিয়ে আসতে হয় তিনি আমাদের হাত ধরে নতুন করে শেখান। আরও মন দিয়ে ভালো লাগাতে বাধ্য করেন সাহিত্যের মতো সংলাপ। গল্পের বলার ধরনকে চিত্রভাষার মাধ্যমে জারিয়ে নিয়ে। ভালো লাগান চিত্রনাট্যের সূক্ষ্ম বুনন। তাঁর ছবির ফ্রেম। প্রতিটা সিরিজে একই অভিনেতাদের বারবার নানা চরিত্রে ফিরিয়ে আনা ব্যবহার আমাদের চমকে দেয়। অবাক করায়। যেন লেখক, পরিচালক, ক্রিয়েটার মাইক ফ্ল্যানাগান বেরিয়েছেন এক গল্প বলার বিরাট শোভাযাত্রায়। যেখানে ভর করে আছে ইহলোক। পরলোক। ভবিষ্যত। আর শুধুই আমরা। যারা ছাড়া এই গল্প বলা সম্ভব নয়। যারা থাকলে কথকের রেকাবিতে দক্ষিণা পড়বে। কথক হয়ে উঠবেন হ্যাঁ এক্কেবারে ঠিক ধরেছেন ক্রিয়েটার নন ‘অথর’।
আপনার পরের কাজ দেখার অপেক্ষায় মাইক । আমাদের ভূত চতুর্দশীর চোদ্দ প্রদীপ আর শাকের শুভেচ্ছা রইলো আপনাকে।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা গুলি