ঠিকানা লেখা নেই
এক
হুড়মুড় করে শোভাবাজার মেট্রোর সিঁড়ি দিয়ে উঠে অটো ধরতে যাবো আর ঠিক সেই সময়ে এমন বেমক্কা একটা ধাক্কা লাগবে বুঝতেও পারিনি। ভদ্রলোকের হাত থেকে সিগারেটটা ছিটকে পড়ে গেলো। ল্যাপটপের ব্যাগ নিয়ে কোনো রকমে নীচু হয়ে সিগারেটটা তুলতে গেলে ভদ্রলোক বললেন থাক ভাই। ওটার আর কাজ নেই। ভেবেছিলাম বিরক্ত হবেন। খিস্তি দেবেন। অবাক হয়ে মুখের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। বিড়বিড় করে বলেই ফেললাম নীললোহিত না? দেখলাম হাসি খেলে গেলো লোকটার মুখে।
চিনতে পারলে?
কী মনে হল?
সেটা বলাটা কঠিন।
নাকি বলতে চাও না?
না না তা না। আসলে আমার জীবনে অতো ঘুরে বেড়ানো নেই। লোক দেখা নেই। অভিজ্ঞতার ভাঁড়ার শূন্য। ছাড়ুন আমার কথা। আপনি এখানে?
দেখছিলাম এখনও পুজোর সেই আমেজ আছে কিনা। আকাশটা ঠিক আগের মতো নীল হয় কিনা।
কি বুঝলেন?
চশমার ফাঁক দিয়ে তাকালেন ভদ্রলোক। অফিসে দেরী হয়ে যাবে না তো? যেভাবে ছুটছিলে। চলো একটা সিগারেট খাওয়া যাক। টেনে নিয়ে গেলেন যে দোকানটায় সেখানে সত্তরের দশকের একটা বাংলা ছবির গান বাজছে। হেমন্ত কি বুঝতে পারছি না। সিগারেট ধরিয়ে জানতে চাইলেন, পুজো সংখ্যাগুলো কি সব বেরিয়ে গেছে? ঘাড় নাড়ি।
হ্যাঁ তো।
আর সিনেমা?
বুকিং কাউন্টার খোলেনি তবে কম্পিটিশান খুব।
কী করা হয় তোমার? মানে কাজ কী করো?
যখন যেমন যা পাই।
সিগারেটে লাস্ট টান দিয়ে বললেন বাহ এটা তো খুব ভালো।
সিগারেটের ব্র্যান্ডটা ভালো লাগলো না আমার কথা বোঝার আগেই বললেন চলো তোমাকে এবার অটোতে তুলে দিই। বারণ করলাম। শুনলেন না।
একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কিছু মনে করবেন না। সাহস করে তাকাই।
বলো না।
এখনও ভেতরে ভেতরে কী সেই রাগটা আছে? ক্ষিদে?
আবার হাসি খেলে গেল মুখে। কাঁধে হাত রাখলেন। যদি এই প্রশ্নটাই তোমাকে করি? কী উত্তর দেবে?
জোরের সঙ্গে মাথা নাড়ি। নেই। ক্ষিদেটাও না।
ভদ্রলোক কোনো রিএ্যাক্ট করলেন না। শান্তভাবে বললেন আমাদের সময়ে কেউ কেউ স্বপ্ন দেখতো একটা পাহাড় কেনার। আর আশেপাশের কোনো কোনো বন্ধু চাইতো পাহাড়ের মতো মৃত্যু। আমরা কোনটাকেই স্বীকার করিনি। তাই আমাদের কোনো ঠিকানা নেই। আছে কী তোমার?
উত্তর দিতে পারলাম না।
রাস্তাটা পার হয়ে গেলেন মানুষটা। এখন হয়তো সাহেব পাড়া ঘুরে একবার কলেজস্ট্রিট ঢুঁ মারবেন। সামনে একটা লরীতে করে ঠাকুর যাচ্ছে। কাপড় জামা কিচ্ছু পরানো হয়নি। ন্যাংটো। মা ফোন করে জানতে চাইলো আজ বাড়ি ফিরবি তো? কাল কিন্তু মহালয়া। কাল তর্পণ ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন