চালতা

 
গণেশ পুজো তেমন ভাবে এর আগে পশ্চিমবঙ্গে জাঁক করে প্রচলিত ছিল না। বুড়ো আংলার সেই ছোট্ট লাল পেট মোটা গণেশটা বড্ড কাছের ছিল আমাদের। এমনকি একচালার চোখ টানা প্রতিমার পাশে গণেশ দাদা পেটটি নাঁদা সেই তো কবেকার ছোট্ট বেলার স্মৃতি। সব ছেলে মেয়েদের মধ্যে গণেশেরই তো ছিল বেশি আহ্লাদ তার মায়ের কাছে। তাকে নিয়ে প্রচলিত গল্প গাথাও তো অনেক। আগমনী আর বিজয়ার সুরে শিউলি যখন চারিদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে আঁচল তখন সবার মাঝে গণেশদাদাই তো তার লজ্জায় মাথায় এক গলা ঘোমটা টানা বউকে পাশে নিয়ে কত কত প্যান্ডেল আর বাড়ির চন্ডীমন্ডপে দাঁড়িয়ে থেকেছে আমাদের জন্য। সেই গণেশ দাদা হাল খাতায় প্যাকেট পাইয়ে দিয়েছে কত কত পয়লা বৈশাখের সকালে। আজ তার পুজো। সকালের ঝিম ধরা বাজারে যখন হন হন করে হাঁটছি মাসি হাঁক দিল। থমকে দাঁড়ালাম। মাসি হাসি হাসি মুখ করে বললো কী দেখছো শুনি? চোখ তো আমার ছানা বড়ার মতো হয়ে গেল। 
 এক ঝাঁক চালতা। তার মানেই তো পুজো এসে গেল মাসি। পাশে বসা ভাইয়ের কাছে বস্তা ভরা কাঁচা তেঁতুল! মা আসলেন বলে। মাসি আমার ব্যাগে চালতা ভরতে ভরতে বলে দাঁড়াও দিকিনি দু দন্ড। তার আগে ভাদ্র মাস যাক। আর একটু জল পড়ুক ফল গুলোর গায়ে। রান্না পুজো হোক। তারপর তো মায়ের ভোগে চালতার চাটনি। তেঁতুল দিয়ে মাছের টক। বাপের বাড়ির আদর যত্ন বলে কথা। ফিরতি পথে মিষ্টির দোকানে বেজায় ভিড় দেখে মনে হল সবাই গণেশকে লাড্ডু আর মোদক খাওয়াতে ব্যস্ত। অথচ পৃথিবীর এই আদিতম প্রানী যার মাথাটা গণেশের মাথা সে বড্ড চালতা খেতে ভালোবাসে। উত্তরবঙ্গে তার সাথে যখন বসবাস করছিলাম এক বুড়ো মাহুত আমাকে একটা চালতা গাছ দেখিয়েছিলেন। তার নীচে আমরা অনেকক্ষণ বসে ছিলাম। আজ সকালে উত্তরপাড়ার এক চিলতে চালতা আমাকে সেই গাছটার কথা মনে পড়ালো। ফিসফিস করে সেই বুড়ো মাহুত বললেন হাতি পুজো করে কী হবে বাবু? ওদের খাবার নেই জঙ্গলে এখন। কয়েকটা চালতা গাছ পুঁতলেও তো ওরা বেঁচে যায়। ওরা না থাকলে আমরাও যে থাকবো না। কতদিন আগের এক জঙ্গল সকালটা তছনছ করে দিল আমার। এরজন্য দায়ী থাকলো মাসির চালতা। জানি না সে চাটনি হয়ে কবে আমার পাতে আসবে। জানি না আমি আবার কবে যেতে পারবো উত্তরবঙ্গ। খুঁজে পাবো আবার চালতা গাছটাকে। তোর্সার জল থেকে উদ্ধার করা টারজান কি অনেক বড় হয়ে গেছে? এখনও কি সে চিলাপাতার জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে খাবার জোগাড় করে? চালতা গাছ খুঁজে পেলে আনন্দে শুঁড় দোলায়? জানি না!

মন্তব্যসমূহ

  1. আপনার লেখা "ইন্দুবালা ভাতের হোটেল" বইটা পড়লাম। অসাধারণ লেগেছে। এমন আবেগ এর আগে খুব কম বই পড়ে অনুভব হয়েছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন চমৎকার একটি লেখার জন্য এটা আমার বই রিফিউ ব্লগঃ www.soumittro.com

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় লেখা গুলি