ভুলে না যাই


 

ওরা অভিনয় করে গান শুনিয়ে মানুষকে সচেতন করতো। প্রশ্ন করতো রাজার নানা রকমের খাম খেয়ালি কাজ কর্ম নিয়ে। রাষ্ট্রের অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতো তাদের পালা গুলি। ছোট ছোট গানের জলসা। তা রাজা বা রাষ্ট্র এইসব মানবে কেন? আমার দেশে থেকে আমাকেই গালাগালি করবে? থাকতে দিয়েছি এই না কত ভাগ্য। দাঁড়াও শায়েস্তা করা হবে তোমাদের। প্রত্যেক অভিনয় আর সঙ্গীত শিল্পীর জিভ কেটে নেওয়া হল। যাতে তারা আর রাজার বিরুদ্ধে একটা সংলাপও না উচ্চারণ করতে পারে। গান গাইতে না পারে। খেপিয়ে তুলতে না পারে জনগণকে। থেমে গেল যেন সব কিছু। রাজা আরও অত্যাচারী হয়ে উঠলো। আর এই ভেঙে যাওয়া মানুষ গুলো। জিভ কাটা মানুষগুলো জড়ো হতে থাকলো আবার দু একজন মিলে। মুখের ভাষা তাদের কেড়ে নিয়েছিল রাজা ঠিকই। কিন্তু শরীরটাকে তো কাড়তে পারেনি। কাজেই মুখের ভাষাকে তারা শরীরের ভাষায় পরিণত করলো। জন্ম হলো এক নতুন আঙ্গিকের। প্যান্টোমাইম। মানুষ সেইসব দেখে হেসে গড়িয়ে পড়লো। কাঁদলো। শরীরের ভাষাই কোন কথা না বলে প্রতিবাদ করলো। রাজার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালো। মেনে নিল না অত্যাচার। অপকর্ম। তারও অনেক দিন পরে সিনেমার জন্মলগ্নে সাদা পর্দায় ফিরিয়ে আনলেন তাঁদের সেই কবেকার আর্টফর্মকে চ্যাপলিন আর তাঁর বন্ধুরা। প্রশ্নগুলো এলো আরও মারাত্মক ভাবে। ঘাড় ধরে চ্যাপলিনকে বের করে দেওয়া হয়েছিল আমেরিকা থেকে। কেন? সেগুলো সব আমাদের জানা। তাহলে আজ হঠাৎ এইসব লেখার দরকার পড়লো কেন? আফগানিস্তানের একজন কৌতুক শিল্পী ফজল মহম্মদ ওরফে খাসা জওয়ানকে খুন করেছে তালিবানরা। ফজল জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে রোগা পাতলা একটা মানুষকে গাড়িতে তোলা হয়েছে। মুখে তার ভয়ের লেশ্মাত্র নেই। কিছু একটা বলাতে পাশের লোকটি তাঁকে থাপ্পড় মারছেন। এরপর যে ছবিটি পাওয়া যায় একটি গাছ থেকে ঝুলছে ফজলের ক্ষতবিক্ষত দেহ। তালিবানরা স্বীকার করেছে মেরে ফেলেছে তারা ফজলকে। ঠিক যেমন নৃশংসভাবে তারা মেরেছে দানিশকে। ফজলের ঝুলন্ত দেহটাকে দেখে বারবার কেন যেন চ্যাপলিনের কথা মনে পড়ছিল। কেন মনে হচ্ছিল আসলে সব ক্ষমতার দম্ভটাই এমন। দর্পটা এমনই তেজ দেখায়। মানুষকে আর মানুষ বলে ভাবে না। কিন্তু এটাও তো ঠিক। যতবার খুন করা হবে শিল্পীকে। একজন সাংবাদিককে। সাধারণ মানুষকে গুম করা হবে ধর্মের নামে, জাতির নামে, রাষ্ট্রের দোহাই দেখিয়ে। খেতে দেওয়া হবে না তাকে জল পর্যন্ত। ততবার তারা জন্ম নেবে। বারবার। চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবে। এইভাবেও বাঁচা যায়। প্রশ্ন করা যায়। তখন যেন দৃষ্টি ঝাপসা না হয় আমাদের। বধির যেন না হয়ে যাই আমরা। করোটি যেন বিভ্রান্ত না হয় হে শিল্পী... বিপ্লবী...।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা গুলি