সমস্ত রাজার গল্প
এক দেশে এক রাজা ছিল। সেই রাজা যা করেন ভালোর জন্য করেন। প্রজার মঙ্গল কামনায় তিনি সদা উদগ্রীব। প্রজার হয়তো জমি চাষের জন্য লাঙলের দরকার রাজা তাঁকে কিনে দিলেন একটা এমন পাখি যে সকাল আর সন্ধ্যেতে গান শোনাবে। সেই প্রজা সকাল আর সন্ধ্যে গান শুনলো কিন্তু জমি চাষ করতে পারলো না। তার খাবার হলো বাড়ন্ত। যে কামার তার আগুন জ্বালাবার জন্য জ্বালানি সংগ্রহ করতে পারছে না রাজা তাকে এনে দিলেন এমন এক পালঙ্ক যাতে শুলে নানা রকম স্বপ্ন দেখা যায়। কিন্তু কামারের যে কাজ বন্ধ। তার পেটে ক্ষিদে সে স্বপ্ন দেখবে কী করে? এইভাবে রাজা সকলকে উপকার করে বেড়ালেন সেটাই যার আসলে সেটার কোন দরকার ছিল না। জন দরদী রাজার নামে আস্তে আস্তে রাগতে থাকলো মানুষ। তারা রাজার বিরুদ্ধে গান বাঁধলো। নাটক করলো। স্লোগান লিখলো। মিছিল করলো। সেইসব সেই তেপান্তরের পাড়ে বসে ব্যাঙ্গমা ব্যঙ্গমি দেখলো। তাদের ছানা পোনারা দেখলো। সেইসব খবর তারা পাশের দেশে গিয়ে গল্প করলো। পাশের দেশের লোকেদের তো সেই একই অবস্থা। রাজার সেবায় তাদের প্রান যায়। তারাও গর্জে উঠলো রাজার বিরুদ্ধে। এইভাবে সমস্ত পৃথিবীটা। সব রাজারা দেখলেন ভারী মুশকিল। নিজেদের সিংহাসন টলোমলো। এই বুঝি রাজত্ত্ব যায়। প্রথমেই তারা হুকুম দিলেন কাটো ব্যঙ্গমা আর ব্যঙ্গমীর ডানা। যাতে তারা উড়ে উড়ে খবর এদিক ওদিক না করতে পারে। প্রজাদের এমন ওষুধ খাওয়াও যাতে তাদের কথা বন্ধ হয়ে যায়। রাজার বিরুদ্ধে কোন কথা সে বলতে না পারে। যা যা হুকুম হলো সব সব পালন করা হলো মন দিয়ে। কথা বন্ধ হলো। গান। নাটক। প্রতিবাদ। লেখা। ব্যঙ্গমা ব্যাঙ্গমীর ওড়াও। কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গেল সব কিছু। রাজার দয়ায় আর সেবায় অতীষ্ট মানুষ কিছু করতে পারলো না। তারপর একদিন এলো কিছু বামন মানুষ। বিচিত্র তাদের সাজ। ডিগবাজি খেয়ে, ভল্ট দেখিয়ে, দড়ির ওপর হেঁটে তারা নানা রকম কসরত দেখাতে থাকলো। সবাই অনেক দিন পরে মন খুলে হাসলো। কিন্তু এটা কি সত্যিই হাসির জিনিস? আসলেই কি তারা বলছে না শরীরের ভাষা দিয়ে রাজা তাদের কেমন করে বন্দী করে রেখেছে? রাজা কিভাবে অত্যাচার করছে। তারা ছোট ছোট চিরকূটে পাশের দেশের খবর দিলো সবার হাতে গুঁজে। ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী নেই তাতে কী হয়েছে? মানুষ গুলো তো এখনও বেঁচে আছে। বুদ্ধি আছে। তারা আবার সবাই মনে মনে একে অপরের সাথে জড়ো হতে থাকলো। একে অপরের খবর নিলো। তারপর একদিন সবাই মিলে সব দেশের বেড়ার পাঁচীল গুলো গুঁড়িয়ে দিল। রাজার নিয়ম গুলো ভেঙে দিল। ঠিক তখনি তারা দেখতে পেলো আবার তারা কথা বলতে পারছে। আবার তারা গান গাইছে। আবার ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমীর গজিয়েছে নতুন ডানা। তারা সোনার কাঠি আর রুপোর কাঠি ছুঁইয়ে আবার একটা গল্প বলতে শুরু করেছে। যে গল্পে আর কোন রাজা থাকছে না। রানী না। রাজপুত্রও না। থাকছে সেই মানুষ গুলো যারা আসলেই পালটে দিয়েছিল সব কিছু।
ঋণ - দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন