ক্ষমা করবেন
আমাদের যেমন মন খারাপ হয়। কোন একটা দেশেরও কি হয়? জানি না। তবে দেশটা কাদের নিয়ে?আমাদের নিয়েই তো। তাহলে আমাদের মন খারাপের ছটা যদি দেশের গায়ে লাগে। দেশের মন খারাপের রঙ আমাদের গায়ে লাগবে না কেন? লাগে। ভীষণ ভাবে লাগে। আমরা বেশিরভাগ সময় সেটা অস্বীকার করি। ভুলিয়ে দিতে চাই। কখনও এড়িয়ে চলি। জীবনটাকে রঙচঙে চকলেটে মোড়া কাগজে ঢেকে ফেলি। ভুলে যাই না। ভুলিয়ে দিই কষ্ট করে। অথচ লোকসান গুলো সঙ্গোপনে নিয়ে বেড়াই। তাতে নিজেদের ক্ষতি বোঝা যায় না। দেশের ক্ষতি হয় মারাত্মক। কিন্তু সেই দেশ কখনও আমার দিকে আঙুল তোলে না। দায়ী করে না। বরং সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলা হয়ে হেমন্তের আলোয় অপেক্ষা করে। কখন আমরা দেশের মন কেমনটা বুঝতে পারবো। কখন বুঝবো তার মন খারাপটা। যে খাবার দাবারের ছবি গুলো অনবরত পোষ্ট করে যাচ্ছি ফেসবুকে। যে বিয়ের শাড়িতে উদ্ভাসিত হয়ে দাঁড়াচ্ছি সেলফির আয়নায়। দুটো খাবার পেটে পুরে শরীর জুড়িয়ে যখন লিখছি এই স্ট্যাটাস তখন যারা এই গুলো সরাসরি আমাদের যোগান দ্যান তাঁরা রাস্তায়। এই হেমন্তের নরম সোনালী আলোয়, নবান্নের প্রাক্কালে, ক্ষেতের ফসল ঘরে তোলার পথে তাঁরা আজ প্রতিবাদে। তাঁরা আজ রাজধানীর পথে। যে দেশের সরকার তার কৃষকদের গায়ে এই শীতে জল ঢালে। যে দেশের সরকার কৃষকদের ওপর লাঠি চার্জ করে। যে দেশের সরকার ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস চালায় সে সরকার আর যাই হোক মানুষের সরকার হতে পারে না। কিছুতেই না। আমি সাপোর্ট করলেও না। আপনি সাপোর্ট করলেও না। মিডিয়া পাশে দাঁড়ালেও না। আজ দেশের চরম মন খারাপের দিন। যারা খাবার দ্যান তাঁরা অন্নহীন। এই অভিশাপের দাবদাহ থেকে আমরা নিজেরাও বাঁচবো না। হে কৃষক ভাইরা, বোনরা, মায়েরা আমাদের ক্ষমা করবেন। কারণ আপনারা যখন গভীর শীতে রাস্তায়। আমরা তখন লেপের আদরে সেলফি মোডে। দল বদলের হিসেব নিকেষে, শস্তা হিংসায়, কচুরীপানার দলাদলিতে ব্যস্ত। আমরা ভুলে গেছি তেভাগা। আমরা ভুলে গেছি রক্তে বোনা ধানের কথা। আমরা ভুলে গেছি আমাদের হেঁটে আসা রাস্তাটা। ক্ষমা করবেন। মনি বলতো যে দুবেলা দু মুঠো খাওয়ায় তার পেটে যদি ভাত না থাকে তাহলে সে বাড়িতে সুখ থাকে না। গভীর দীর্ঘতর অসুখ আমাদের। ক্ষমা করবেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন