তোমাদের ছুঁয়ে দেখবো বলে
মুক্তি যুদ্ধের মিউজিয়ামে তখন সবে শরতের রোদ এসে পড়েছে। সকাল বেলায় হরতালের ঢাকা নিঃশ্চুপ নয়। নিরবিচ্ছিন্ন নয়। উষ্ণতায় টগবগ করেও ফুটছে না। চাকায় মোটর লাগানো রিক্সায় আমরা তিনজন। একটা রিক্সাতে এইভাবে উঠতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এইভাবে যাওয়ার কোনো অসুবিধে হওয়ার কথা কেউ চিন্তা করতে পারেন না। প্রথমে কিন্তু...কিন্তু...তারপরে মন বললো এটাই এখানকার রীতি...চারপাশে দেখছো না সবাই চেপে চলেছে। আমাদের সঙ্গী-বন্ধু পারভেজ হাঁটতে পারলে খুশি। আপনি যদি সমস্ত শহর হাঁটতে বলেন, পারভেজ হাসি মুখে হাঁটতে পারেন। পারেন তার নিজস্ব কবিতার মতো...। পারেন সব কিছুকে শান্ত ভাবে অস্বীকার করে, ধূলিস্যাৎ করে এগিয়ে যেতে। প্রথম দিন যখন দেখা হয়েছিল সেই চরম সন্ধিক্ষণে আমা্দের লেগেছিল ঝগড়া। কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জসীমউদ্দিন তারও অনেক পরে R.T মানে রবীন্দ্রনাথ টেগোর। দুজনকেই পারভেজ ধরা ছোঁওয়ার বাইরে রাখতে চান। আর দুজনেই আমার বড় মন কেমনের, বড় কাছের। আমাদের কথাকাটাকাটি, আমা্দের ঝগড়া, চলেছে পথে ঘাটে, ঢাকার চায়ের দোকানে। পারভেজের সুন্দর ছিমছাম গোছানো বাসায় অনেক বন্ধুর মধ্যে। ঢাকা শহরে এই চারদিনে হরতাল...মন কেমন...শাহবাগ...সেলিনা আপা...বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বর...সব কিছু যেন আপন করে নিয়েছে আমাদের। দেবালয় এমনিতেই স্বল্পভাষী। মিটিমিটি শুধু হাসে, আর পান খায়। আমি গুচ্ছের বকি, ঝগড়া করি, অনেক সকালে রাহি কিম্বা অনেক রাতে জামির দেখা করতে এলে ও্দের সাথে আড্ডা দিই...বকাবকি করি...। বাতিঘর ইলিনয় থেকে ফোন করে অবাক হয়, “সত্যি কল্লোল? সত্যি! তুমি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে গুড়ের চা খেয়েছো?” আমি তখন সাঁই সাঁই করে এগিয়ে চলেছি রিক্সাতে। পারভেজ বলছে দেখে...দেখে চালান। রিক্সাটা একটা বিদেশী গাড়ির সাথে টক্কর নিচ্ছে। আনিসুল চট্টগ্রাম থেকে ফোন করে জানিয়েছে আমার ঢাকা আসাটা নাকি কাকতালীয় আজ বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দিন। আজ ফাঁসির রায় বেরোবে।
মিউজিয়ামের
আম গাছটার ডালে ওটা কি দোয়েল পাখি? শিস দিয়ে দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে উড়ছে? ওই যে শহীদ
রুমী দাঁড়িয়ে আছেন ফটোর আড়ালে। আর আমার মনে পড়ে যাচ্ছে বালীর সোহমের কথা। “কল্লোলদা,
একাত্তরের দিন গুলো পড়েছো?” সেলিনা আপা আমার সামনে বসে। “জানো কল্লোল, তুমি তো
ইন্ডিয়া থেকে এসেছো, একদিন হয়েছে কি আমার বাড়ির সুরু রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। একটি লোক
হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে আমার পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলে গেলো "গায়ত্রী সন্ধ্যা লেখার
জন্য আপনার হাজার বছর পরমায়ু হোক আপা।” আমি শুধু শুনি, আমার চোখ ভার হয়ে আসে। কখন
বুঝতে পারিনা, একটা হাত ধরে আছে কাঁধটা। দেবালয়ের দিকে তাকালে, শান্ত স্বরে বলে, “এবার
উঠি”? আমাদের ওঠা আর হয়ে ওঠে না কোথা থেকেও। একটা জায়গা থেকে উঠে, আমরা আর একটা
জায়গা যাই। পারভেজ এগিয়ে যান দূরে দূরে। আমি দেবালয় অনেক পেছনে...অনেক দূরে।
জিরোবার অছিলায়, রাস্তার ধারে পানের পশরায় জমে ওঠে আড্ডা। মিউজিয়ামে অসংখ্য নামহীন
করোটির মাঝে আমি কাকে খুঁজি? নরম আলো এসে পড়েছে বারান্দায়। কয়েকজন প্রেম করছে
দূরে, গাছের ছায়ায় বসে। ওরা কি জানে কি বলতে চেয়েছিল রুমী? যখন তাকে আর কোনোদিন
পাওয়া গেলো না! কিম্বা ওই নামহীন কঙ্কালগুলো। কফির কাপে ধোঁওয়া ওঠে। শরতের সকাল
আমাকে অন্য গল্প বলে কানে কানে।
প্রোগ্রাম
কো-অর্ডিনেটর রফিকূল ইসলামের সাথে আড্ডা দিতে দিতে কোথা থেকে যে চলে আসেন আমার না
দেখা অথচ খুব কাছের শামসূর রাহমান। চলেন আসেন নির্মলেন্দু গুণ। ঝরে পড়ে কবিতা
রফিকূল ভাইয়ের কন্ঠে। বিস্মিত আমি। দেবালয় শান্ত, চুপ। পারভেজ এগিয়ে দেন আলোচনা। “আপনি
বলেন...সেই নির্মলেন্দু গুণের কবিতা পাঠের গল্পটা”। জ্বলজ্বল করে ওঠে রফিকূল
ভাইয়ের চোখ। দোয়েলটা কি আমাদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেলো? ওই বাচ্চাটা কেনো এক মৃত
ভাষা সৈনিকের ছবির সামনে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে? “শুনছেন?” সম্বিত ফেরে আমার। রফিকুল
বলেন, গল্পের মতো...আমাদের পাশে ভিড় জমতে থাকে। কি অসাধারণ তার বলার ভঙ্গি আর
সকালটা। ... পঁচাত্তরের পরে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা যেত না বাংলাদেশে। করলেই
জেল, হয়তো বা মৃত্যু পরোয়ানা। যে লোকটার কাঁধে ভর দিয়ে একটা দেশ জন্মালো, তাকেই
ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চললো সরাসরি। ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হল নাম দিনের আলোয়। কেউ
তো বলে না লোকটার কথা। কেউ তো বলে না একটা লোক বলেছিল প্রতিরোধ গড়ে তোলো। কেউ তো
বলে না, যাদের খুব বিশ্বাস করেছিলেন তারাই একদিন বাড়ির মধ্যে ঢুকে মেরে ফেলেছিল
তাঁকে। মারা যাবার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারেননি বঙ্গবন্ধু সবচেয়ে
কাছের মানুষও হন্তারক হতে পারে। মুখ আর মুখোশের খেলা চলতে পারে অবধারিত ভাবে। ১৯৭৫
সালের ১৫ অগাষ্টের পর কেউ বলে না তার কথা। বুকের মধ্যে পাঁজরায় শুধু ভারি হয়ে থাকে
কান্না। এই রকম করে যখন দিন যায়, বহুদিন পর ডাক পড়ে কবিদের। কবিতা সম্মেলন হবে। পড়তে হবে কবিতা। সামরিক শাসন
তাতে আর কি আছে? কবিতা পড়ানো চাই। রাজার ইচ্ছা বলে কথা। চললেন সবাই...তরুণ কবিরা
কবিতা পড়তে। একে একে সবাই পড়লেন কবিতা। ফুল...নদী...বাংলার মাঠ, ঘাট...বিছানো
জোছনা...। এবার তার পালা...শান্ত পদে ডায়াসে উঠে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ালেন
নির্মলেন্দু গুণ। তরুণ কবি। হাতে তার ধরা সদ্য লেখা কবিতার পাতা। তিনি পড়লেন...। না
তিনি শুধু পড়লেন না...তিনি উচ্চারণ করলেন...। সেই মানুষটার কথা...যে মানুষটার জন্য
আজ এই দেশ...আজ এই স্বাধীনতা...। যার নাম উচ্চারণে তখন মৃত্যু...তখন জেল। তিনি
তাকালেন সমবেত শ্রোতার দিকে। তিনি তাকালেন রাইফেলধারী উর্দির দিকে। আর কণ্ঠস্বর
থেকে ঝরে পড়লো শব্দমালা...
“সমবেত সকলের মত
আমিও গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি,
রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেইসব গোলাপের একটি গোলাপ গতকাল
আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
শহিদ মিনার থেকে খসে পড়া একটি রক্তাক্ত ইট
গতকাল আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
সমবেত সকলের মত আমিও পলাশ ফুল খুব ভালবাসি,
'সমকাল' পার হয়ে যেতে সদ্যফোটা একটি পলাশ গতকাল কানে কানে
আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
শাহাবাগ এভিন্যুর ঘূর্ণায়িত জলের ঝর্ণাটি আর্তস্বরে আমাকে বলেছে,
আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
সমবেত সকলের মত আমারও স্বপ্নের প্রতি পক্ষপাত আছে,
ভালোবাসা আছে, শেষ রাতে দেখা একটি সাহসী স্বপ্ন গতকাল
আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
এই বসন্তের বটমূলে সমবেত ব্যথিত মানুষগুলো সাক্ষী থাকুক,
না-ফোটা কৃষ্ণচূড়ার শুষ্ক-ভগ্ন অপ্রস্তুত প্রাণের ঐ গোপন মঞ্জরীগুলো
কান পেতে শুনুক, আসন্ন সন্ধ্যার এই কালো কোকিলটি জেনে যাক;
আমার পায়ের তলার পুণ্য মাটি ছুঁয়ে আমি আজ সেই গোলাপের
কথা রাখলাম, আমি আজ সেই পলাশের কথা রাখলাম,
আমি আজ সে স্বপ্নের কথা রাখলাম।
আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসি নি,
আমি আমার ভালবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।
রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেইসব গোলাপের একটি গোলাপ গতকাল
আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
শহিদ মিনার থেকে খসে পড়া একটি রক্তাক্ত ইট
গতকাল আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
সমবেত সকলের মত আমিও পলাশ ফুল খুব ভালবাসি,
'সমকাল' পার হয়ে যেতে সদ্যফোটা একটি পলাশ গতকাল কানে কানে
আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
শাহাবাগ এভিন্যুর ঘূর্ণায়িত জলের ঝর্ণাটি আর্তস্বরে আমাকে বলেছে,
আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
সমবেত সকলের মত আমারও স্বপ্নের প্রতি পক্ষপাত আছে,
ভালোবাসা আছে, শেষ রাতে দেখা একটি সাহসী স্বপ্ন গতকাল
আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
এই বসন্তের বটমূলে সমবেত ব্যথিত মানুষগুলো সাক্ষী থাকুক,
না-ফোটা কৃষ্ণচূড়ার শুষ্ক-ভগ্ন অপ্রস্তুত প্রাণের ঐ গোপন মঞ্জরীগুলো
কান পেতে শুনুক, আসন্ন সন্ধ্যার এই কালো কোকিলটি জেনে যাক;
আমার পায়ের তলার পুণ্য মাটি ছুঁয়ে আমি আজ সেই গোলাপের
কথা রাখলাম, আমি আজ সেই পলাশের কথা রাখলাম,
আমি আজ সে স্বপ্নের কথা রাখলাম।
আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসি নি,
আমি আমার ভালবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।
কেউ কি আমাকে কোনো একটা ফলসা গাছের
কাছে টেনে নিয়ে গেলো? মণি কি বললো আমাকে, “ঠিক
ওইখানেই ছেড়ে রেখে এসেছিলাম সব কিছু!” ঠাম্মা কি আমাকে বললো “টুকনু কাঁচা মিঠে আমগাছটা
দেখে আসিস।’’ দাদা কি এখোনো খুলনার ম্যাপটা গুগুলসে খোঁজে? বাবা কি কবিতার
বইটা নিয়ে অনেক রাতে হ্যারিকেনের আলোর সামনে বসে আছে? একটা ঘোর ঘূর্ণাবর্তের
মতো...ঝোড়ো হাওয়ার মতো আমার চারপাশে ঘোরে। আমার চোখ বেয়ে...গাল বেয়ে উষ্ণ স্রোতের
যে ধারা বেয়ে চলেছে সে কি এই দেশটার জন্য? নাকি সেই সব মানুষগুলোর জন্য যারা এই
দেশটাকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলো। যাদের ছুঁয়ে দেখবো বলে আবার এতো বছর পর, এতো বাধা
নিষেধের মধ্যেও ফেরা। একটা হাত কাঁধকে ছোঁয়। তাকিয়ে দেখি দেবালয় আবার শান্ত, স্মিত
হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে, “এবার উঠি? ঠাম্মির জন্য মাটি নিতে হবে তো।” দেবালয়ের
ঠাম্মি তখন মৃত্যু শয্যায়। বাড়ির লোক চেয়েছিলেন দেশের মাটি। দেবালয় নিয়ে এসেছিল।
শুনলাম কাল অনেক রাতে তিনি মারা গেছেন। দেশের মাটি তাঁর কপালে ঠেকানো হয়েছিল।
কিন্তু অনেকেই দেশের মাটি পায়নি। ঠাম্মা, মণি, হাঁদা একটা দেশের কথা চিন্তা করতে
করতে আর একটা দেশে মরে গেলো। আর আমি যখন আটচল্লিশ বছর পরে সেই দেশে ঢুকলাম তখন
দেখলাম আমার চারপাশে স্মারক। মৃত্যুর...ইতিহাসের...ভবিষ্যতের। আমার চারপাশে সেই সব
মানুষ যারা একএকটা ফলসা গাছের ছায়ায় আছে দেশের স্বপ্ন নিয়ে। তুমি যদি সত্যি থাকতে
ঠাম্মা তাহলে দেখতে তোমার কাঁচা মিঠে গাছে দোয়েল পাখি শিস দিচ্ছে। আর মণির ফলসা
গাছের নীচে আড্ডা মারছে তরুণ কবি...সাহিত্যিক...ছবি আঁকিয়েরা...যারা আর কিছুক্ষণের
মধ্যেই আরো একটা দেওয়াল রঙের তুলির আঁচড়ে ভরিয়ে দেবেন। স্লোগানে, স্লোগানে, আঁকায়,
লেখায়। যাঁরা চিৎকার করে বলবেন “আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি।”
তুমি কি আজ বিশ্বাস করবে ঠাম্মা, আমি শুধু এসেছিলাম
তোমাদের ছুঁয়ে দেখবো বলে।
ঋণ-
নির্মলেন্দু গুণ, পাফরভেজ চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম,
দেবালয় ভট্টাচার্য, সেলিনা হোসেন। আর আমার মা। যিনি উৎকণ্ঠায় থাকেন আমার জন্য
প্রতিটা দিন...প্রতিটা রাত।
আপনার সাথে আমার দেখা হবার কথা ছিল না, ফেসবুক কোথা থেকে কোথা জোড় লাগিয়ে দিল বুঝতে পারলাম না। না আমার ইচ্ছা ছিল মেঘলা সকালটা আপনাকে নিয়ে নাস্তা করার, খুব ক্ষিদা লেগেছিল।
উত্তরমুছুনঢাকা, গাড়ি আর মানুষের এক বিশাল জ্যাম। কোথাও সামান্য নিরবতা নেই। ক্লান্ত তবু ছুটন্ত ইট কাঠ পাথরের শহরে প্রথম আমার আসাটাও আপনার ঠাকুরমা-পিসিদের মত কলকাতা যাবার মত। বড্ড একা, সুন্দর কিছু দৃশ্য ফেলে অসুন্দর দৃশ্যের ক্যানভাসে ঢুকে পড়া!
এরপর সেই ক্যানভাসে নিজের মত রঙ লাগাতে হয়েছে। কখনও জল রঙ, কখনও তেল, কখনও কাঠ কয়লা। আজও লাগিয়েই যাচ্ছি।
আপনার ঢাকার স্বল্প সময়ের ভ্রমনে কেও সময় দিতে পারিনি, আপনিও না-আমিও না। তবে এরপর ছাড়ছি না.....
রাহী
ইচ্ছে রইল দেখা হলে আরও অনেক গল্প শোনার। বেশী কিছু বলতে পারব না চোখ ভারী হয়ে এসেছে, ঠাম্মা হাসপাতালে, কথা বলতে পারে না, কাউকে দেখলেই শুধু কাঁদে, আমি এবারে তার কাছে গিয়ে বলতে পারব যে সত্যিই সেই কাঁচামিঠে আম গাছটা আছে এখনও সেখানে।
উত্তরমুছুনভাল লাগল। আরও অনেক শুভেচ্ছা রইল। ভাল থাকবেন।
মন ভালো করে দেয়া লেখা। কিন্তু ঢাকা ঘুরে গেলেন জানালেন না ভালো হইল না মিয়া।
উত্তরমুছুনঅনেকটা রাস্তা হেঁটে পার হয়ে এসেছিলেন আমার ঠাকুরদা , তার পর একাত্তর আসে ফিরে যেতে পারেন নি , এর পর আরও দুই প্রজন্ম। অনেকটা রূপ কথা , একটা ভাষা, কিভাবে যেন এক গুচ্ছ ভালো মানুষের সাথে চেনা পরিচয় হয়ে গেল যাদের চোখে আমি দাদুর দেশ কে দেখি ,
উত্তরমুছুনরাজনি খোঁজ দেয়, তারানা জানায় তার বিশ্ববিদ্যালয় এর কথা, কিভাবে যেন আমি আদি তোমার (কল্লোল লাহিড়ী) হাত ধরে আবার বাংলা দেশের আন্দোলন এর খোঁজ পেয়েছিলাম,
মনে পড়ছে বালির একটা ঘরে বসে সোনালি রাঙা বিকেলে তুমি সেই অদ্ভুত ভাষার ডকুমেন্টারিটা দেখিয়েছিলে
যাব আমার ঠাকুরদার দেশে যাব, বন্ধুদের দেশে যাব।
যে রাজ পথ জুড়ে যে শহর জুড়ে বাংলা ভাষার ছায়া লালন করে একটা আন্দোলন কে সে শহরের কথা এভাবেই জানা প্রয়োজন ।
এক সন্ধ্যের মধ্যে লেখাটা চারবার পড়লাম, আরো চারবার কবিতাটা। ভালো বা খুব ভালো হয়েছে, বলার মত অনুভূতি নেই। শুধু আছে গলার কাছে দলা পাকানো একটা কষ্ট। আদ্যন্ত 'ঘটি' হওয়ায় বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্র বলেই পরিচিত। আত্মিক বা মানসিক টান বোধ করিনি কোনদিন। বাংলাদেশের আলোচনা শুধুমাত্র 'ঘটি বাংগাল'-এর যুদ্ধে। দেশভাগের কষ্টের কথা শুনলেও প্রথম তা অনুভব করি যেদিন বাবার বদলীর চাকরী হওয়ায় ৭ বছর থাকা একটা বাসা ছেড়ে আর একটাইয় যাই। সেখান থেকে আবার কোথাও। বুঝতে থাকি 'ছেড়ে আসার কষ্ট। তবু তো আমাদের ছিল না আইনী কাঁটাতার।
উত্তরমুছুনএমনিতেই আমার দুঃখবিলাসী কিন্তু সেই দুঃখবিলাসের একটা আনন্দ আছে।সেই আনন্দ থেকেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে্র অফিস ঘরে আপনাকে ফোনের খুব বাজে আওয়াজে 'নন্দর মা' শুনিয়েছিলাম। শব্দ বাধা দিলেও অর্থ ছিল পরিষ্কার। কষ্ট, বিষন্নতা, বেদনা। যার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল আপনার জন্মদিন জানতে চাওয়ার উত্তরে - "উদ্বাস্তুদের জন্মদিন হয়না। আমি প্রতিদিন জন্মাই তাই প্রতিদিন আমার জন্মদিন"।
মাতৃভাষার দেশ দেখার গল্প শোনার জন্য উদগ্রীব। ভালোলাগা ও শুভেচ্ছা রইল।
যে জীবন, যে জগৎকে আমরা প্রতিদিনের কাজকর্মে হাটে ঘাটে হাতের কাছে পাইতেছি, জীবন তাহা নয়। এই কর্মব্যস্ত অগভীর একঘেয়ে জীবনের পিছনে একটি সুন্দর পরিপূর্ন আনন্দ ভরা সৌম্য জীবন লুকানো আছে। সে এক শাশ্ব্ত, রহস্যভরা গহন জীবনের মন্দাকিনী। যাহার গতি কল্প হইতে কল্পান্তরে; দুঃখকে তাহা করিয়াছে অমৃতত্বের পাথেয়, অশ্রুকে করিয়াছে অনন্ত জীবনের উৎসধারা - অপরাজিত, বিভূতিভূষণ
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনঝরঝরা মেদহীন লেখা, এককথায় অসাধারণ!
উত্তরমুছুনদারুণ।
উত্তরমুছুন