Slumdog Millionaire



Slumdog Millionaire

এখনকার ভারত মজে থাকে রিয়ালিটি শো’তে। আমরা একটু একটু করে নেশায় ডুবতে থাকি। আর ঠিক তখনই অন্ধ সুরদাস ভিক্ষে করে রাস্তার ধারে। একশো ডলার এগিয়ে দেয় জামাল। অন্ধ সুরদাস চিনিয়ে দেয় নোটের ওপর থাকা বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিং কে, জানিয়ে দেয় লতিকার ঠিকানা। পরে অনেক পরে সে এক প্রশ্নের উত্তরে জিতে নেবে একলক্ষ টাকা। ঠিক সেই সময় তার সঙ্গ দেবে অন্ধ সুরদাস... বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিং...আর ফেলে আসা শৈশবের স্মৃতি-যা তাকে হারতে দিচ্ছে না...ভয় পাইয়ে দিচ্ছে না। হু ওয়ান্টস টু বি আ মিলিওনেয়ার (who wants to be a millionaire)শোয়ের আদলে কৌন বনেগা কড়োরপতির ছায়া অনুষ্ঠানে জাঁদরেল ক্যুইজ মাস্টার প্রেম কুমারের (অনিল কাপুর) সামনে জামাল (দেব প্যাটেল) নির্ভিক।। গোটা ছবি জুড়ে তাই অতীত আর বর্তমানের দৌড় ঝাঁপ। গোটা ছবি জুড়ে তাই কয়েকটি প্রশ্ন। এই কয়েকটি প্রশ্নের ওপর দাঁড়িয়ে আছে জামালের জীবন...তার বেঁচে থাকা...মরতে মরতে বেঁচে যাওয়া সবকিছু। ছবিটাও দাঁড়িয়ে থাকে এই প্রশ্নগুলোর ওপর। তার অনবদ্য আঙ্গিক, গল্প বলার কৌশল, চকিতে এক দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্যে উত্তরণের যে সম্পাদকীয় পন্থা তা দেখার মত...ভালোলাগার মতো। জামালকে এই গেম (game) জিততে হবে...না হলে লতিকাকে বার বার ফিরে যেতে হবে স্টেশন থেকে...বারবার ফিরে দেখতে হবে শৈশবকে...ফেলে আসা সময়কে

ছবির শুরু, জামাল পুলিশ কাস্টডিতে সেখানে তার ওপর টর্চার করছে পুলিশ জানতে চাইছে একজন চাওয়ালা, বস্তিবাসী, অশিক্ষত জামাল কী করে উত্তর দিয়ে দিচ্ছে সব কিছুর তাহলে এর পেছনে কি কোনো রহস্য আছে? তাকে মারা হয়, ইলেকট্রিকের শক দেওয়া হয়...বসিয়ে রাখা হয় অনেকক্ষণ তার সামনে চালিয়ে দেওয়া হয় সেই শো এর ভিডিও ক্যাসেট জামাল ফিরতে থাকে তার অতীতে...তার গল্পে আমরা দর্শকরা পুলিশের সাথেই তার কথা শুনি

একদিকে বইতে থাকে জামাল, আমির আর লতিকার গল্প অন্য দিকে প্রেম কুমারের শো যেখানে প্রেম কুমার নিজে মেনে নিতে পারছে না জামালের এই অবিশাস্য জিতে যাওয়া আর একদিকে থানাতে, যেখানে বসে তার জীবনকে ফিরে দেখছে জামাল তিন দিক দিয়ে এগোতে থাকে ছবি... এগোতে থাকে জামালের লতিকাকে খুঁজে পাওয়ার এক সুন্দর জার্নি

১৯৮৮ সালে মীরা নায়ারের সালাম বম্বে (Salaam Bombay ) ছবির হিরো, রাস্তার সেই ছেলেটা বড় একা হয়ে পড়ে ছবির শেষে তার বান্ধবীকে হারিয়ে সে একা গণেশ বিসর্জনের উতসবে সে ব্রাত্য ছবির শেষ দৃশ্যে পকেট থেকে বার করে আনে লাট্টু কোথাও ফিরে পেতে চায় তার হারানো শৈশব...তার নষ্ট জীবনকে সেখানে এক অন্য বম্বের চেহারা সেই বম্বে তখোনো মুম্বাই হয়নি সালাম বম্বের নায়ক আর যাই হোক জামালের মতো হিন্দু মুসলমানের দাঙ্গা দেখেনা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ছুটে বেড়ায় না জামাল বরং প্রানপণে চেষ্টা করতে থাকে সহজ ভাবে বাঁচার দাদা আমিরের মতো অন্ধকার জগতের লোক হতে চায় না সে খুব সাধারণ...সাধারণ থাকতে চায় জামাল তাই রাম বলতে সে বোঝে দাঙ্গা, সুরদাসকে মনে করতে গিয়ে দেখে তার বন্ধুদের চোখ গেলে দেবার ঘটনা অশোকচক্রের ঘটনার উল্লেখে সে উলটে পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞেস করে ফুচকার দাম কত? জানতে চায় গত পরশু সবার সামনে থেকে কে সাইকেল চুরী করলো?

Slum dog Millionaire ছবিটা শেষ হয় একটা ফ্যান্টাসীর মতো কোনো এক জয়গাথা গাওয়া হয় যেন এই জয় গাথা আমার ভারতের...আমার দেশের...যে দেশে জামালের মতো ছেলেরা থাকে যে দেশে লতিকা নাম সার্চ দিলে কম্পিউটার হাজার খানেক লতিকাকে সামনে এনে দেয় যে দেশের ছেলেমেয়েরা পারে এই দুঃসহ দারিদ্রকে মাথা পেতে নিতে আর তার জোয়াল টানতে দারিদ্রকে মহান করে দেখার কিছু নয় বরং দারিদ্রের দৃশ্যগত কোড গুলোকে আবার নতুন করে পড়া বারবার ফিরে ফিরে দেখা


গরীব এই মহামারীটিকে আমার দেশ যদি পুষতে পারে তাহলে সেটা দেখাতে লজ্জা পাবে কেন? তাই নিঃসঙ্কোচে Slum dog Millionaire দেখুন...আর সবাইকে দেখান পরে পাঠ নেওয়া সেই ছবি নিয়ে বিতর্কে মাতুন কারণ আমরা তর্কপ্রিয় ভারতীয়

কিছু কিছু সংবাদ পত্রে লিখতে শুরু করে দিয়েছে Vikas Swarup এর উপন্যাসের নাম পরিবর্তন নিয়ে...তার উপন্যাসের কিছু উপাদান গত অদল-বদল নিয়ে। কিন্তু সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্রে অধিগ্রহণের সময় এমন পরিবর্তনটা স্বাভাবিক। আবারও বলছি অস্কার নিয়ে মাতামাতি করার আগে ছবিটা দেখুন...তর্কে মাতুন...। আরও একবার না হয় ভাবুন

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা গুলি