হস্তশিল্প মেলা-২০১০

 বেশ কিছুদিন আগেই যাওয়ার কথা ছিলো...কিন্তু যাই যাই করে যাওয়া আর হচ্ছিল না। বাড়ির খুব একটা কাছে মিলন মেলা প্রাঙ্গন নয়...বাসে করে যেতে আমার অন্তত দু-ঘন্টা লাগে। কিন্তু তাতে কি? ঘরেরে কাছে দু-ঘন্টার ব্যবধানে এসে বসেছে আমার গোটা রাজ্য...পসরা সাজিয়েছে তার হস্তশিল্পের...পূর্ব মেদিনীপুর থেকে এসেছে শুভ...মুর্শিদাবাদ থেকে করিম, বাঁকুড়া থেকে সোনালীদি...দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে মাধব সরকার...এঁরা সবাই যে আমার চেনা তেমনটা নয়। কিন্তু ওই সারাদিন ঘুরতে ঘুরতে...কথা বলতে বলতে চেনা হয়ে যায়। বেড়িয়ে পড়ে গ্রামের কথা...দেশের কথা...পেশার কথা...ভালো লাগা কিছু মুহূর্ত...এর টানেই তো মেলায় ঘোরা।
পূর্বাশার ব্যাঙ্গালোরের বন্ধুদের জন্য কিছু কেনার ছিলো...মায়ের দাবী ছিলো লক্ষ্মী পেঁচার...শ্রী বলেছিলো "কাকা আমার জন্য একটা পাখা এনো"। বড়মার চাই কুনকে। আমি খুঁজতে থাকলাম।
নারকেলের মালা, বাঁশ আর বেত দিয়ে তৈরী ময়ূর। কারিগর এসেছেন বর্ধমান থেকে। ধান রোয়া, কাটা, তোলা, ঝাড়ার ফাঁকে এই কাজ। নিজস্ব কোনো জমি নেই। প্রতিবছর মেলাতে আসেন। কিছু বিক্রি হয়।
পেঁচার পসরা। এঁরা কেউ এসেছেন নদীয়া থেকে। আবার কেউ অন্য কোনো জায়গা। মুশকিল হলো কোনটা ছেড়ে কোনটা নিই।
নানার সাইজের ধামা আর কুনকে। কিন্তু আমি জানি বড়মার এতে মন ভরবে না। খুলনার কোলাপোতা গ্রামে নাকি সোনার বরণ কুনকে ছিলো। কি জানি বাবা। জন্মাবধি ভাড়া বাড়ি...আর এক টুকরো আকাশ দেখে...আর ফলসা...আমবাগানের গল্প শুনতে শুনতে তা পঁয়ত্রিশটা বছর তো পার করে দিলাম। যাই হোক বীরভূমের স্টলে পেলাম তার সন্ধান। সত্যি চোখ জুড়িয়ে গেলো।
 কাঠের ওপর পিতলের কাজ। দাম মাত্র দুশো টাকা।
নানা লোকের চাহিদার জিনিষের জন্য যখন হন্যে হয়ে ঘুরছি তখন হঠাত দেখা সাত্তারের সঙ্গে। সাত্তার চিত্রকর। ক্লাস সিক্সে পড়ে। থাকে ঠেকুয়া চক নামের এক গ্রামে। জেলা পুর্ব মেদিনীপুর। যাঁরা একটু খবর রাখেন তাঁরা হয়তো জানবেন এই গ্রাম ও তার আশে পাশের নানা গ্রামে রয়েছেন অসংখ্য পট চিত্রকর। তাঁদের গল্প না হয় আর একদিন করবো। এখন দেখি সাত্তার পায়ে প্লাস্টার...বসে বসে একমনে ছবি আঁকছে। পা ভেঙেছে প্রায় একবছর। প্রথমে ভুল চিকিতসা, তারপর আবার নতুন করে চিকিতসার পর আপাতত ভালো আছে। তাও প্লাস্টার কাটতে এখনো ১৭ সপ্তাহ। সাত্তার তার তিন দাদা, বৌদি, মা-বাবা সবার সাথে এসেছে। বললো "জানো...আমাদের প্রত্যেকের জন্য এবার আমরা বসার জায়গা পেয়েছি। আমি নিজেই বিক্রি করেছি হাজার টাকার মত ছবি। একদিন আমার গ্রামে এসো তোমাকে আমি আমার আরো অনেক পট দেখাতে পারবো। পূর্বাশা সাত্তারের কাছ থেকে কিনলো তার ব্যাঙ্গালোরের বন্ধুকে দেওয়ার জন্য একটা পট। সাত্তার সাঁওতাল পট আঁকাতে পটু।
এইসব কথার মাঝে ভুলে গিয়েছি আমার পাঁচ বছরের ভাইঝি শ্রী'র দাবী। তালপাতার পাখা। ময়ূরাক্ষীতে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম তাল পাতার পাখা দেখে।
শীতলপাটির গল্প অনেক শুনেছি। পড়েছি লীলা মজুমদারের লেখায়। কিন্তু তালপাতার পাখাটাও যে কি নিপুণ ভাবে শিল্পীর হাতের ছোঁওয়ায় এখনও প্রাণবন্ত তা ভাবতে অবাক লাগে। এইটুকু সজীবতা এখনও আমাদের শিল্পীদের মধ্যে আছে এত কষ্ট, দারিদ্র্য সত্ত্বেও।
 এবার ফিরবো। কিন্তু এখোনো তো না দেখা রয়ে গেলো অনেক কিছু। এখোনো তো অনেকের সাথে কথা বলা হলো না। এই যে আমার গোটা রাজ্য এসে প্রায় একমাস আমার পড়শি হয়ে বসবাস করলো...আদান প্রদান হল...বিক্রি বাট্টা হল...অনেক পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা হল। সাত্তারের সাথে পরিচয় হল। শুভ চিত্রকর বললো "দাদা গোটা মহাভারতের প্রায় পুরোটা এঁকে ফেলেছি...সামনের বছর রাষ্ট্রপতি প্রতিযোগিতায় ফর্ম ফিলাপ করবো..." তখন যেন মেলার মধ্যে কোথাও একটা খুশির হাওয়া বইতে থাকে। সেই হাওয়া পাক খায়...আমার মনে...আমার ব্লগে...আমার জন্মভূমিতে...।


মন্তব্যসমূহ

  1. West bengal..so called SONAR BANGLA...i didint know the real meaning of this phrase...i always ask myself what is there in our BENGAL that people call it by that name...but suddenly i have found kallol da's bolg named "hastasilpo mala",and by reading this i have realised that what art means to these people..peoples r suffering in west bengal and that i know..but art is what they live for,it make them happy.But what do we do for them?do we give them enough value?many people dont know this side of Bengal including mei dont think so...Hope 1 day these people will get their due and that day we can proudly say that our west bengal has maintained its stature..but we have to prtect these people..

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় লেখা গুলি