শব চরিত্র কাল্পনিক



মহেশ আর হরিনাথকে কি আপনি চেনেন? অনেক দিন ধরে বাংলা সাহিত্যে তাঁরা খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ত্ব। লেখক পরশুরাম এক বিজ্ঞান মনস্ক মানুষ আর একজন দার্শনিক মানুষকে পাশাপাশি রেখে প্রচন্ড বন্ধুত্ত্ব ঘটিয়ে ফেলেছেন। শুধু তাই নয় সেই বন্ধুত্ত্বের জন্যেই এক ধুন্ধুমার কান্ড। তাঁর বিখ্যাত গল্পমহেশের মহাযাত্রার সূচনা। কিন্তু সে তো প্রায় আশি বছর আগের কথা। তখনকার হরিনাথ বিশ্বাস করত ভূত... প্রেত... স্বর্গ... রম্ভায়। মহেশ ফুৎকারে উড়িয়ে দিত সব। শুয়োর না খেলে যে হিঁদুর উন্নতি নেই সেই কবেই মহেশ চিৎকার করে বলতো। শুধু তাই নয় তার এই দার্শনিক বন্ধুটি যখন ক্লাসে পড়াতো, আমাদের অধ্যাপক মহেশ সেখানে গিয়েও চুপিচুপি বসে থাকতো। তর্ক চলতো। কলেজের লোকজন অতীষ্ট হতো। সবাই বলতো ওদের হরিহর আত্মা। কিন্তু একদিন ভূত চতুর্দশীর রাতে কবরস্থানে এমন কি ঘটলো যাতে দুই বন্ধুর সম্পর্ক চিরদিনের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল?



অনেক কাল আগে গল্পটি যখন কোন এক শীতের দুপুরে হেলে দুলে পড়ি বেশ মজা লাগে। কিন্তু কষ্টটা হয় দুই বন্ধুর বন্ধু্ত্ব ভেঙে যাওয়া নিয়ে। ওদের এতোকালের ঝগড়া থেমে গিয়ে। তারপর তো বাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গায় অনেক পলি পড়েছে। আমার চুল আস্তে আস্তে পাক ধরেছে। অনেক বন্ধুত্বকে অনেক ভাবে হারিয়ে ফেলেছি। অনেক ঝগড়া অসমাপ্ত হয়ে থমকে থেমে গেছে। এমন এক সময়ে বিডন স্ট্রিটের চৈতন্য লাইব্রেরীর লম্বা ছাদে আমার ডাক পড়ে। আশিসদা আমার হাতে ধরিয়ে দেয় একটা গল্প। 'মহেশের মহাযাত্রা'। নাটক লিখতে হবে। চমকে উঠি। মনে হয় গল্পের বইয়ের পাতা থেকে চোখ কটমট করে তাকাচ্ছে মহেশ, হরিনাথ আর তাদের স্রষ্টা পরশুরাম।

এর আগে বেশ কিছু চিত্রনাট্য আর মেগা সিরিয়াল কোন রকমে লিখেছি। ব্লগে জমা হয়ে আছে বেশ কিছু লেখা। দেশে ও দশে চিত্রনাট্যের কর্মশালা নিয়ে বেড়াচ্ছি। কিন্তু তাই বলে নাটক? প্রায় যখন ছুটে পালিয়ে আসতে যাবো আশিসদা শর্ত রাখলেননিজে না লিখে আমার দলের সবাইকে দিয়ে লেখা। ওরা শিখুক।আমি মোক্ষম ফাঁকি মারার একটা সুযোগ পেলাম। চোদ্দ থেকে চব্বিশ - সব বয়েসের ছেলেমেয়েরা ঘিরে থাকলো আমাকে। 

সারাদিন হইচই। কাগজে কলমে মুখে মুখে তর্ক। রাগ অভিমান সবই একটা গল্প আর নাটক নিয়ে। সারাদিন সারা রাত নাটক লেখা, নাটক পড়া। এক হই হই কান্ড...রই রই ব্যাপার। কিন্তু নাটক লেখার কর্মশালা যত এগোতে থাকলো সাহিত্য থেকে নাটকে পরিগ্রহণের পথ যত বিস্তৃত হতে থাকলো আমি অনেক কিছু শিখতে শুরু করলাম আমার কচি-কাঁচা বন্ধুদের কাছ থেকে। শিখলাম মঞ্চ আসলে কি? শিখলাম মঞ্চের ট্রানজিশান। শিখলাম মঞ্চে আলোর কাব্যময়তা। নাটকে সঙ্গীতের প্রয়োগ। তার ব্যাঞ্জনা। শিখলাম তাদের কাছে, আসলে আমাকে যাদের শেখানোর কথা ছিল।

মাঝে মাঝে পরীক্ষা...ঝড়... বৃষ্টি...ডেঙ্গু আমাদের কোন কিছুই কাহিল করতে পারে নি। আমরা তিন বছর ধরে নাটক লিখলাম। রিহার্সাল দিলাম। পছন্দের জিনিস রাখলাম। অপছন্দ আবার কাটলাম...লিখলাম...সবাই হই হই করে এতো বড় কর্মযজ্ঞ এগিয়ে নিয়ে গেলাম। তারপর কি নাম হবে সেই নিয়ে চললো আরও কত কত তর্ক বিতর্ক টানাপোড়েন। তারপর সব ঠিক হয়ে গেলে নাটক মঞ্চস্থ করা। 

জানি না নাটক সবার ভালো লেগেছে কিনা। কিন্তু গত বছর যে প্রযোজনার নতুন উন্মেষ, সেই শুভম রেপার্টারির মহেশের মহাযাত্রা অবলম্বনে নাটক 'শব চরিত্র কাল্পনিক' এবার প্রথম আকাদেমিতে। ১৮ ফেব্রুয়ারী রবিবার। এক গল্প থেকে সবাই মিলে নাটক লিখে নাটক মঞ্চস্থ করার এক অভিজ্ঞতা যদি এই শহরে বসে পেতে চান তাহলে আপনাকে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলাম। শুধু তাই নয় এই ভালোবাসার মাসে আমাদের এই প্রচেষ্টা আপনার ভালো লাগলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে। অনেক ধন্যবাদ। আন্তরিক শুভেচ্ছা



মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা গুলি