নো চুদুরবুদুর মাইরি



উড়িতেছে ডাঁস, উড়িতেছে বোলতা, উড়িতেছে ভীমরুল,
নিতম্বদেশ আঢাকা দেখিলে ফুটাইবে তারা হুল।
মহাকাশ হতে গু-খেকো শকুন হাগিতেছে তব গায়
বাঙালি শুধুই খচ্চর নয়, তদুপরি অসহায়।
(পুরন্দর ভাট)


কবি পুরন্দর ভাট কবে সেই লিখে গেছেন খনার বচনের মতো সত্যি কথাটা মাইরি। সুমন মুখুজ্জ্যে আপনি মাইরি সেটা আবার একবার প্রমান করে ছাড়লেন। ‘অসহায়’ না হলে মাইরি  এমন একটা ছবি করার হ্যাপা আমাশার মতো তলপেটে গুঁতো দিতে থাকে? ছোট্টবেলার কবেকার সেই “গোপাল বড় সুবোধ বালক” পড়ার প্রাতিষ্ঠানিক প্রারম্ভ থেকে শুরু করে...মায় কি হাল আমলের চে গুয়েভারা...গোটাটাই বাঙালি হজম করে ফেলেছে। আর আপনার কাঙাল মালসাট হজম করতে পারবে না? কিন্তু মুশকিলটা হয়ে গেছে কি জানেন তো...এই ছবিটার আগে একটা পাতলা চটি বই কোথাও শরীরের সাথে লেপটে থেকেছে...। কোথাও চিলেকোঠায় না হোক...বইয়ের তাকে...কলেজের ব্যাগে...ছুঁক ছুঁক প্রতিবাদী আগুনের ধিক ধিক সেক্সি বাতাবরণে ইনকিলাব জিন্দাবাদের তামসিক ছায়ায় প্রতিপালিত হয়েছে আমাদের মনের জঠরে। আমাদর বিপ্লব মনের উদরে অস্থি কণায়। আর সেই কবেকার এক তরুণ ঔপন্যাসিক প্রতিবার ফেব্রুয়ারির বইমেলায় সপ্তর্ষি প্রকাশনার স্টলের সামনে গম্ভীর হয়ে বসে থেকেছেন। আমরা উঁকি মেরেছি। ফ্যাতাড়ুদের নতুন কান্ডকারখানার, নতুন অঞ্চলের ঠিকানা হাল হদিশের সন্ধানে। আর সেই গম্ভীর নির্বাক ঔপন্যাসিক প্রতিবার একটা করে স্বাক্ষর দিয়েছেন...নতুন আনকোরা বইয়ের পাতায়। বাড়ি এসে প্রাতিষ্ঠানিক পিঠ চাপড়ানোর জ্যাকেটটা গা থেকে খুলেই পড়তে শুরু করেছি...। না হলে মুশকিল...। ফ্যাতাড়ুরা যে আমার বাড়ির চৌকাঠ মাড়াবে না। সাঁই সাঁই চাকতি গুলো ঘুরে বেড়াবে না ঘরময়। কল্পনায় মানুষ উড়বে না আর। দাঁড় কাকটাও কেমন যেন ভ্যানিশ হয়ে যাবে। 

এতো গেল আমার কাঙাল মালসাটের সাথে ঘর করার কথা। কিন্তু এবার আপনি বলুন তো? নো চুদুরবুদুর অ্যাঁ! ছবিটা করার আগে...কিম্বা করার সময়ে...কিম্বা করার পরে আপনি একশো শতাংশ সিওর তো কী করতে চেয়েছিলেন...আর মালটা কী হলো? একটা সাদা রুমালকে বেড়াল দেখানোর যে দক্ষতা অর্জন করতে হয় সেটা আপনার নেই। না আগের ছবি গুলোতেও ছিলো না। কাজেই আকাশে ফ্যাতাড়ুদের উড়তেই হবে। ভূতকে ভূতের মতো টিং-টঙ করে পর্দায় দেখাতেই হবে। আর ছবির প্রথম দিকে সেই যে একবার একটা ভূত এলো তাকে আর সারা ছবিতে দেখা গেলো গেলো না। এই ডিপ্লোমা ফিল্মমার্কা বোকামো গুলো কি না করলেও চলতো না? নাকি  আপনি এবং আপনার ক্যামেরাম্যান বুঝতে পারেননি অত্যন্ত বোকা বোকা পন্থায় চিত্রায়িত হয়ে যাবে ফ্যাতাড়ু্দের ওড়া? চাকতি গুলোকে স্পিলবার্গের ইটির চাকতির ন্যায়ে ঘোরাবেন। আর মনে মনে ভাববেন কি কেরামতিটাই না হলো। আধো আলো আর আধো অন্ধকার হলেই যে ‘ফিল্ম নয়ার’ হয় না। সেটা তো পুরন্দর ভাটও জানে। চলচ্চিত্রীয় ব্যাকরণ মন্ডলীতে যাঁরা তাবড় বিদ্যাবিশারদ তাঁরা অবশ্যই গুরু গম্ভীর চিন্তা করবেন। উত্তর ভাঙাচোরাবাদের গ্রাফিক্স অলঙ্করণ পন্থায় নতুন মোচড় নামক কোনো তত্ত্বের বীজ কোথাও লুক্কায়িত থাকবে। আর আমরা ভুলে যবো কস্তুরিকাকে, আমরা ভুলে যাবো আলেয়াকে, আমরা ভুলে যাবো সোলানাসকে ও সত্যি ভুলে যাবো একদম ঘরের কাছে...এখোনো ছোটো খোকা খুকিদের ভাত খাওয়াতে যে ছবিটা এখোনো মা-মাসিরা দেখিয়ে থাকেন হীরক রাজার দেশকে। আহা...কী মুশকিল সেটাও তো প্রতিষ্ঠান বিরোধীতা। কিন্তু অমন করে নয় তো! এতো বাঙালীর নব তরঙ্গের সময়।

না বিশ্বাস করুন... কোনো ব্যক্তিগত জন্মান্ধ ক্রোধ নেই আমার। আমিও ভাঙতে চাই...আমিও কফি খেতে খেতে মনে করি উড়ছি আকাশে...। ফ্যাত ফ্যাত সাঁই সাঁই পাখার আওয়াজ হচ্ছে। কিন্তু সেই যে কবে থেকে আপনার মাথায় বামপন্থার চৌত্রিশ বছর বনবন করে পাক খাচ্ছে...। আর যে সেই কবে থেকে কমরেডদের রাত্রিকালীন স্বপ্নে এবং জাগরণে দুঃস্বপ্ন দেখছেন তার ইয়ত্তা পাওয়াটা খুব মুশকিলের হয়ে পড়ছে। তাই যত পেরেছেন গাল মন্দ করেছেন। হ্যাঁ উপন্যাসেও আছে। কিন্তু মুশকিলটা হলো কি জানেন তো...উপন্যাসে আরো অনেক কিছুকে গালমন্দ ছিলো... অনেক কিছু ভেঙে বেরিয়ে আসা ছিলো। আপনি সেগুলো ভাঙতে পারেননি। সেগুলো আপনি সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। কিম্বা অতিশয় ডায়ালগের নিভৃত কোণে চালিয়ে দিয়েছেন। ভালো করেছেন এটাই এখন দরকার। না হলে আপনি এই রাজ্যে টিকতে পারবেন না। যতই আপনি সুমন মুখুজ্জ্যে হোন...আর যতই আপনার প্রথম চাকরীর ইন্টারভিউয়ের সময় আপনার মন্ত্রী হয়ে যাওয়া বন্ধু দাঁড়িয়ে থাকুক। চিড়েটা তো চিড়েই। তাকে জল না দিলে ভিজবে কেমন করে? তার ওপর এখন তো সময়টা আমাদের রাজ্যের...সেই সময়ের দশা...যখন এক নাট্যকার ঠিক করবেন কেউ হাসবে না কাঁদবে। নাকি জীবটা হবে সিনেমার মতো? কোনো একজন কবির মিছিলে হাঁটার স্বার্থকতা বহন করবে এটা প্রতিবাদ না ঠাট্টা। ভাগ্যিস অনেক কবি বেঁচে নেই। ভাগ্যিস এখোনো জ্যোৎস্নায় মলয় বয়...হেন হয় তেন হয়। 

আপনার ছবিতে কালীঘাট আছে, গঙ্গা আছে, কলকাতার রাস্তা আছে, সিপিএম আছে। খিস্তি আছে। ম্যাজিক দেখানো আছে। প্রতিবাদ করতে যাওয়ার অপভ্রংশ আছে। সস্তা হাততালি কুড়োবার রাস্তা আছে। কিন্তু যেটা নেই সেটা হলো কাঙাল মালসাট। না উপন্যাসীয় রেখাবন্ধনে। না পরিগ্রহণের চালাকিত্ত্বে...না মানসিকতায়। কাজেই কালীপুজোর রাস্তায় যতই আপনার ক্যামেরা নকশালদের ভূত দেখুকনা কেন। যতই তাদের চোখে লাল আলোর স্পেশাল এফেক্ট দিন না কেনো...যতই নিতম্ব...পাদের আওয়াজ মাল্টিপ্লেক্স কাঁপাক না কেনো...এই ছবির প্রাণটা আপনি অনেক আগেই কালীঘাটের আদি গঙ্গায় পুঁতে রেখেছেন। সেখান থেকে আর তুলে নিয়ে আসতে পারেননি।

সত্যি মাইরি কোনো চুদুরবুদুর না করেই বলছি। 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় লেখা গুলি